অবৈধভাবে আমদানিকৃত কাঁচামালে তৈরি হচ্ছে অনুমোদনহীন ভেজাল ওষুধ

প্রথম পাতা » বিশেষ প্রতিবেদন » অবৈধভাবে আমদানিকৃত কাঁচামালে তৈরি হচ্ছে অনুমোদনহীন ভেজাল ওষুধ
শুক্রবার ● ২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৯


অনুমোদনহীন ভেজাল ওষুধ

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

প্রতিনিয়ত দেশে অনুমোদন ছাড়াই আমদানি হচ্ছে ওষুধের কাঁচামাল। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে মিথ্যা ঘোষণায় এসব কাঁচামাল আমদানি করা হয়। আর তা দিয়েই তৈরি হচ্ছে নকল, ভেজাল ও নি¤œমানের ওষুধ। বর্তমানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে আমদানি করা ওষুধের কাঁচামাল বিক্রি হচ্ছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রায়ই রাজধানীর মিটফোর্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে নকল, ভেজাল ও অনুমোদনহীন ওষুধ উদ্ধার করছে। ওষুধ শিল্প এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানীর মিটফোর্ড, মতিঝিল ও চট্টগ্রামের একশ্রেণীর কেমিক্যাল ব্যবসায়ী মিথ্যা ঘোষণায় ওষুধের কাঁচামাল আমদানি করছে। অভিযোগ রয়েছে, ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে কাস্টমসের এক শ্রেণীর লোকজনও জড়িত। দেশীয় কিছু প্রতিষ্ঠানে ওসব কাঁচামালের চাহিদা রয়েছে। মূলত সবকিছু জেনেশুনেই কাঁচামাল আমদানি করা হচ্ছে এবং বন্দরে পৌঁছার পর মিথ্যা ঘোষণায় তা ছাড় করা হচ্ছে। আর ঔষধ প্রশাসন ও কাস্টসম কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে ওসব কাঁচামাল আমদানি, ছাড়, মজুদ, বিক্রি সবই নির্দিষ্ট চ্যানেলের মাধ্যমে হচ্ছে। চ্যানেল ছাড়া হঠাৎ কেউ ওসব কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারে না। আগে মুষ্টিমেয় কিছু ব্যবসায়ী আমদানি করতো। এখন অনেকেই তা আমদানি ও সরবরাহ করছে।
সূত্র জানায়, গ্লুকোজ, স্যালাইন বা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধের কাঁচামালই শুধু, প্রতিনিয়ত আমদানি হচ্ছে নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ও অম্লনাশক ওষুধের কাঁচামালও। আর নামে-বেনামে আমদানিকৃত ওসব কাঁচামাল রাজধানীর মিটফোর্ড, মতিঝিল, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া অবৈধভাবে কাঁচামাল এনে ওষুধ তৈরি করা হচ্ছে। আর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ওসব নকল ওষুধ, যা  ওষুধ শিল্পের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে।
সূত্র আরো জানায়, ফার্মা ও ফুড দুই শিল্পেই ডেক্সট্রোজ অ্যানহাইড্রোজ ও সোডিয়াম সাইট্রেট ডিহাইড্রেট ব্যবহার হয়। তবে ফার্মা গ্রেডে আমদানি বা সরবরাহ করা হলে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী সঠিক মান ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হয়। কিন্তু অবৈধভাবে ওষুধের কাঁচামাল আমদানিকারকরা যথাযথ নিয়ম অনুসরণের তোয়াক্কা করছে না। যদিও ব্লকলিস্ট অনুমোদন ছাড়া কাঁচামাল আমদানির কোনো সযোগ নেই। কেউ যদি অবৈধভাবে ওষুধের কাঁচামাল আমদানি করে তা ওষুধ শিল্পের জন্য হুমকিস্বরূপ।
এদিকে এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক রুহুল আমিন জানান, অবৈধভাবে ওষুধের কাঁচামাল আমদানির বিষয়টি ওষুধ প্রশাসন অবগত হয়েছে। কারা কীভাবে তা আমদানি ও দেশের বাজারে সরবরাহ করছে সে বিষয়ে নজরদারি রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা পেলে অবৈধ কাঁচামাল আমদানিকারক ও বিক্রেতাদের আইনের আওতায় আনা যাবে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া জানান, সব ধরনের অবৈধ আমদানি-রফতানি বন্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে এনবিআর। চোরাচালান প্রতিরোধে জাতীয় টাস্কফোর্সের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে কাস্টমস বিভাগ। বিশেষ করে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কেমিক্যাল আমদানি বন্ধে এনবিআরের অবস্থান খুবই শক্তিশালী। ভুয়া ওষুধ কোম্পানি কর্তৃক কাঁচামাল আমদানি বন্ধ করতে এনবিআরের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কাজ করছে। বর্তমানে কোনো প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে আমদানি করছে কিনা তাও খতিয়ে দেখতে মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। অর্থ পাচার, চোরাচালান ও অবৈধ আমদানি-রফতানির বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান জিরো টলারেন্স।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ৮:০৫:১৩ ● ৬০০ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ