স্বাধীনতাবিরোধীদের পাশাপাশি গণতন্ত্র হত্যাকারীদেরও ক্ষমা চাওয়া উচিত: নজরুল

প্রথম পাতা » রাজনীতি » স্বাধীনতাবিরোধীদের পাশাপাশি গণতন্ত্র হত্যাকারীদেরও ক্ষমা চাওয়া উচিত: নজরুল
বুধবার ● ২০ ফেব্রুয়ারী ২০১৯


সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥


একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার জন্য জাতির কাছে জামায়াতে ইসলামীর যে ক্ষমা চাওয়ার উচিত- সেই দাবির সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী বিএনপিও এখন একমত। তবে এর সঙ্গে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ মিলিয়ে নিয়ে বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, গণতন্ত্র যারা ‘হত্যা করেছে’, তাদেরও উচিত জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ বিষয়ে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল। একাত্তরের ভূমিকার জন্য দেশের মানুষের কাছে ‘ক্ষমা না চাওয়ায়’ ১৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামি থেকে পদত্যাগ করেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক, যিনি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে শীর্ষ জামায়াত নেতাদের আইনজীবী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগিতায় হত্যা, ধর্ষণের মত অপরাধের দায়ে জামায়াতের সাত শীর্ষ নেতার সাজা হয়েছে আদালতে, তাদের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যুদ- ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে। একাত্তরের সেই ভূমিকার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বানে কখনোই সাড়া দেননি জামায়াত নেতারা। রাজ্জাকের আগে আর কেউ দলের সেই অবস্থানের জন্য অনুতাপও প্রকাশ করেননি।
বিএনপি নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল বলে দাবি করে এলেও স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সঙ্গে জোট বেঁধে রাজনীতি করে আসছে সব সমালোচনা উপেক্ষা করে। যুদ্ধাপরাধে দ-িত এক জামায়াত নেতার ছেলেসহ দলটির অন্তত দুই ডজন নেতাকে বিগত একাদশ সংসদ নির্বাচনে তারা মনোনয়নও দিয়েছে। এখন ব্যারিস্টার রাজ্জাকের পদত্যাগের পর জামায়াতের নতুন প্রজন্মের ভেতরেও একাত্তরের ভূমিকার জন্য দলের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি উঠেছে বলে খবর এসেছে সংবাদমাধ্যমে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে নজরুল ইসলাম খানের কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল- ‘এবার আপনারা কী বলবেন?’ জবাবে তিনি বলেন, এই দাবিতো সকলেরই। জামায়াত স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছে সেজন্য তাদের দুঃখ পাওয়া উচিত বা লজ্জা প্রকাশ করা উচিত বা ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত- এটা যুক্তিসঙ্গত দাবি। স্বাধীনতাবিরোধী কাজ যারা করেছে, আমরা নিশ্চয়ই তাদের শাস্তি চাই, বিচার চাই- সবই চাই। এই যুক্তিসঙ্গত দাবি ছাড়াও এ রকম আরও অনেক যুক্তিসঙ্গত দাবি আছে। এই বাংলাদেশে যারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে, স্বাধীনতার সূবর্ণ ফসল যে গণতন্ত্র, সেই গণতন্ত্র যারা হত্যা করেছে তারা তো আজ পর্যন্ত জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির নেতা বলেন, আমরা মনে করি, যারাই অপরাধ করেবে তাদের সবারই ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। আমরাও যদি কোনো দোষ করি জনগনের কাছে, আমাদেরও উচিত ক্ষমা প্রার্থনা করা। কিন্তু আমাদের দেশে এই রীতিরই প্রচলন নাই দুর্ভাগ্যক্রমে। জামায়াতের কাঠামোগত সংস্কার, নাম বদল বা নতুন দল গড়ার পরিকল্পনার বিষয়ে যেসব খবর সংবাদ মাধ্যমে এসেছে, সে বিষয়েও নজুরল ইসলাম খানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। উত্তরে তিনি বলেন, এগুলো তাদের নিজস্ব ও অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমার মন্তব্য করার সুযোগ নাই।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে জামায়াত আর থাকছে না বলেও খবর এসেছে একটি পত্রিকায়, যদিও দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে জোটের সমন্বয়ক নজরুল বলেন, আমার জানা মতে ২০ দলীয় জোটে কোনো পরিবর্তন ঘটে নাই। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আমাদের কখনোই বলা হয়নি যে, তারা ২০ দলের সাথে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জামায়াত একটা আলাদা রাজনৈতিক দল। সেই দলের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ তো আছে, অধিকার আছে, ক্ষমতা আছে। তারা নিতে পারে ইচ্ছে করলে। কিন্তু আমাদের জানা মতে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে আমরা শুনি নাই। বিএনপি বর্জন করলেও আসন্ন উপজেলা নির্বাচন ‘প্রতিন্দ্বন্দ্বিতামূলক’ হবে বলে যে প্রত্যাশার কথা প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, সে বিষয়ে নজুরল ইসলাম খানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এই সিইসি যা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ তাতে ছি ছি করে। কাজেই এই সিইসির যে বক্তব্য, তার ওপর কোনো আস্থা দেশের মানুষের আছে বলে আমার মনে হয় না।
নূরুল হুদার সমালোচনায় নজরুল বলেন, যারা সুবিধা পায় তারাও তাকে অপছন্দ করে কারণ লোকটা ভালো না। ভালো না এই সেন্সে যে দায়িত্ব পালনে তিনি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তারপরেও তারা (সরকার) খুশি যে, তার আচরণ তাদের পক্ষে যায়। জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের সভাপতি হুমায়ুন ইসলাম খান, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীদের নিয়ে নজরুল ইসলাম খান শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তাঁতী দলের সহসভাপতি মজিবুর রহমান, আবদুল মতিন চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক গোলাপ মঞ্জু, সাংগঠনিক সম্পাদক জে এম আনিসসহ কেন্দ্রীয় নেতারাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তারা মোনাজাতেও অংশ নেন। তাঁতী দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ১৮ ফেব্রুয়ারি হলেও বিশ্ব ইজতেমার কারণে তাদের কর্মসূচি পিছিয়ে দেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার তারা জিয়ার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। নেতাকর্মীরা শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সকালে জিয়ার সমাধিতে গেলে পুলিশ প্রথমে তাদের অনুমতি না থাকার কথা জানিয়ে বেরিয়ে যেতে বলে। ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে থাকার পর বিএনপি নেতারা মহানগর পুলিশকে দেওয়া চিঠির অনুলিপি দেখালে তাদের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৬:১৫:৫৮ ● ৫২০ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ