নেছারাবাদের পাঁচ নারীকে জয়িতা সন্মাননা প্রদান

প্রথম পাতা » পিরোজপুর » নেছারাবাদের পাঁচ নারীকে জয়িতা সন্মাননা প্রদান
রবিবার ● ২০ ডিসেম্বর ২০২০


নেছারাবাদের পাঁচ নারীকে জয়িতা সন্মাননা প্রদান

নেছারাবাদ(পিরোজপুর) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

নারী পুণর্জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ১৩৯তম জন্ম এবং ৮৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পিরোজপুরের নেছারাবাদে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে পাঁচজন সফল নারীকে জয়িতা সন্মাননা (ক্রেষ্ট ও সনদ) প্রদান করা হয়েছে।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তাদেরকে ওই সন্মাননা প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নুসরাৎ জাহান জানান, এ বছর এ উপজেলা থেকে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে জলাবাড়ি ইউনিয়নের মো. আব্দুস সালামের স্ত্রী মোসা. তহমিনা বেগমকে সন্মাননা প্রদান করা হয়েছে। ৮ম শ্রেনীতে পড়াবস্থায় দিনমজুর সালামের সাথে বিয়ে হয় তহমিনার। বিয়ের পরে অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে তার সংসার চলত। এক পর্যায়ে বাড়ির পাশে খালি জায়গায় গাছের চারা রোপন করে । চারা বড় হলে স্বামীকে দিয়ে সে চারা হাটে বিক্রী করে এভাবে দিনে দিনে তার ব্যবসায়ের পরিধি বাড়তে থাকে। সে পরে একটি মুরগীর ফার্ম দেয় সেখান থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে তার সংসার চালানোর পাশাপাশি বড় ছেলেকে মাষ্টার্স পাশ করিয়েছেন এবং ছোট ছেলে একাদশ শ্রেনীতে অধ্যয়নরত। অভাব কাটিয়ে সে এখন তার স্বামী সন্তানকে নিয়ে সুখে দিন কাটাচ্ছে। শিক্ষা ও চাকুরির ক্ষেত্রে সোহাগদল ইউনিয়নের মো. বেল্লাল হোসেনের স্ত্রী মোসা. মারজিয়াকে সন্মাননা প্রদান করা হয়েছে। মারজিয়ার বাবা পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রী তারা ৬ ভাই বোন। ছোটবেলা থেকেই মারজিয়া লেখাপড়ায় মেধাবী ছিলো। ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে ভর্তির সময় তার ধর্মভীরু কাকা লেখাপড়া বন্ধের জন্য চাপ দেয়। লুকিয়ে লুকিয়ে সে তার লেখাপড়া চালিয়ে যায়। এস এস সি পাশের পর তার মা লেখাপড়া বন্ধ করে তাকে বিয়ে দিতে চায়। এসময় মারজিয়া তার বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকার মাধ্যমে তার মাকে বুঝিয়ে কলেজে ভর্তি করান। টিউশনি করিয়ে এইচএসসি ও বিএ পাশ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ পান। পরে তিনি চাকরির পাশাপাশি মাষ্টার্স সম্পন্ন করেন। জলাবাড়ি ইউনিয়নের কামারকাঠি গ্রামের মৃত মো. আমজাদ এর স্ত্রী মোছা. ফজিলা বেগমকে সফল জননীর সন্মাননা প্রদান করা হয়েছে। এসএসসি পাশের পর ফজিলার বিয়ে হয়। শশুরের অনেক জমি ছিল কিন্তু ভাঙ্গনে সে জমি অনেকটাই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। নিজে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষিকার চাকরি পায়। ইতিমধ্যে স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসা করাতে অনেক জমি বিক্রী করতে হয়। কিন্তু অনেক চিকিৎসার পরেও স্বামী মারা গেলেন। নিজের আয়ের অর্থ দিয়ে তিনি তার দুই ছেলে ও চার মেয়েকে লেখাপড়া করিয়েছেন। তার বড় ছেলে মো. ফরিদুল ইসলাম (বিএ সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং, ঢাকা), মেঝ ছেলে মো. জাহিদুল ইসলাম রতন (উপ-পরিচালক, ব্যাংলাদেশ ব্যাংক সিলেট), বড় মেয়ে মোসা. উারহানা ইয়াসমিন লিপি ও মেঝ মেয়ে সুলতানা ইয়াসমিন শিল্পি দুজনেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা। সেজ মেয়ে মোসা. শিরিন সুলতানা (সিনিয়র শিক্ষিকা কলেজিয়েট একাডেমী) এবং ছোট মেয়ে মোসা. শিলা আক্তার বিএ অধ্যায়নরত। তিনি একজন সফল জননী। জলাবাড়ি ইউনিয়নের কামারকাঠি গ্রামের শিউলী বেগমকে নির্যাতনের বিভিষিকা মুছে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করার উপর সন্মাননা প্রদান করা হয়েছে। শিউলি বাল্য বিবাহের শিকার তার স্বামীর মুদির দোকান ছিল। বিভিন্ন সময়ে দোকানে মালামাল ক্রয়ের কথা বলে শিউলীকে তার বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা এনে দেয়ার জন্য তাকে নির্যাতন করত। স্বামীর চাহিদামত যৌতুকের পুরো টাকা দিতে না পারায় স্বামী তাকে দুটি মেয়ে ও একটি ছেলে সন্তানসহ তালাক দিয়ে অন্য মেয়েকে বিয়ে করে। বহু চেষ্টা করেও সে আর স্বামীর সংসারে ফিরে যেতে পারেনি। পরে দর্জির প্রশিক্ষন নিয়ে বাবার বাড়িতে থেকে সেই কাজ করে নিজের পিতা ও সন্তানদেরকে দেখছেন। তার বড় মেয়ে নার্সিংয়ে পড়ে অন্য ছেলে মেয়ে দুটিও পড়ালেখা করছে। স্বরূপকাঠি পৌর এলাকার জগন্নাথকাঠি এলাকার আব্দুল মন্নানের স্ত্রী মাহমুদা হাসিকে সমাজে উন্নয়নে অবদান রাখায় সন্মাননা প্রদান করা হয়েছে। সমাজে সেবামূলক কাজ করার জন্য এলাকাবাসীর দাবীর পেক্ষিতে তিনি পৌর নির্বাচনে প্রার্থী হন। ১৯৯৮ সাল থেকে টানা ৪ বার পৌরসভায় সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হয়ে এখন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করছেন। এলাকায় নারী নির্যাতন, বালবিবাহ বন্ধ, যৌতুক বন্ধ, বিবাহ বিচ্ছেদ রোধে ও বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন।

এমআরএ/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৯:২৯:২১ ● ৩৯৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ