বাউফলে মানসিক ভারসাম্যহীন ফিরোজের পাশে নেই স্বজনরাও

প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » বাউফলে মানসিক ভারসাম্যহীন ফিরোজের পাশে নেই স্বজনরাও
বৃহস্পতিবার ● ২ জুলাই ২০২০


বাউফলে মানসিক ভারসাম্যহীন ফিরোজের পাশে নেই স্বজনরাও

বাউফল (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলায় এক সময়ের তুখোড় মেধাবী শিক্ষার্থী ফিরোজের পাশে আজ আর কেউ নেই। সময়ের প্রয়োজনে পরিবারের সদস্যরাও নিজেদের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন তাঁকে। ভাগ্যাহত কাকে বলে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার সূর্যমনি ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের আমিনুল ইসলাম ফিরোজ হয়তো তারই বাস্তব উদাহরণ। বাবা সত্তার গাজীর চার সন্তানের মধ্যে ফিরোজ সবার বড়। ছোট বেলা থেকেই পড়াশুনাতে খুব ভালো ছিলেন তিনি। ক্লাসে কখনো দ্বিতীয় হননি। ১৯৮৩ সালে ৫ম শ্রেণীতে, ১৯৮৬সালে ৮ম শ্রেনীতে টেলেন্টপুলে বৃত্তি পান তিনি। এরপর ১৯৮৮ সালে ইন্দ্রকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় স্টার মার্কস পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ওই বছর পুরো বাউফল উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষায় সব থেকে সর্বোচ্চ নাম্বার পান তিনি। এসএসসি পাশের পর বরিশাল হাতেম আলী কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হন তিনি। বরিশালে পড়াশুনারত অবস্থায় বাজে সঙ্গ জুটলে তার বাবা তাঁকে পটুয়াখালী সরকারি কলেজে ভর্তি করে দেন। বেশ কিছুদিন স্বাভাবিক ভাবেই চলছিলো তার জীবন যাপন। এসময়ে এক সহপাঠির সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পরেন তিনি। আকষ্মিক ওই তরুনীর বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর অনেকটাই অপ্রকৃতস্থ হয়ে পরেন ফিরোজ। এরপর থেকেই মানসিক বিকৃতি ঘটতে শুরু করে তাঁর। ফিরোজ সম্পর্কে এমনটাই জানান তাঁর  সহপাঠিরা ও স্থানীয়রা।
ইন্দ্রকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রবীন শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমার জীবনে ফিরোজের মতো মেধাবী শিক্ষার্থী খুব একটা দেখিনি। কিভাবে যে ছেলেটা এমন হয়ে গেলো বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি।
বাউফল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক কামরুজ্জামান ফিরোজ খাঁন বলেন, ১৯৮৮সালের ওই সম সাময়িক সময়ে ফিরোজের মতো অতো মেধাবী শিক্ষার্থী আমাদের উপজেলায় দ্বিতীয়টি ছিলোনা। ফিরোজের এই করুন অবস্থায় স্বজনরা পাশে না থাকায় আক্ষেপ প্রকাশ করে সমাজের দায়িত্বশীল মানুষদের প্রতি ফিরোজের জন্য ভালো কিছু করার উদ্দোগ গ্রহনের আহবান জানান তিনি।
বর্তমানে চরম মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাঁকে। শারীরিকভাগে অসুস্থ, নেই থাকা খাওয়ার কোনো নির্দিষ্ট কোনো স্থান। উপজেলার পাঙ্গাসিয়া বাজারে এক চায়ের দোকানদার তার দোকানের পিছনে পরিত্যক্ত জায়গায় থাকার জায়গা দিয়েছেন। ঠিকভাবে দুই বেলা খাবারও জুটছেনা তাঁর।
সঠিক চিকিৎসা আর প্রয়োজনীয় সেবা পেলে ফিরোজের সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব বলে মনে করেন, বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সাহা। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
ফিরোজের ছোট ভাই স্কুল শিক্ষক মো. সোহেলের কাছে ফিরোজ সম্পর্কে তাদের ভাবনা জানতে চাইলে বলেন, ও যখন প্রথম অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন আব্বা জমি বিক্রী করে পর্যন্ত ওর চিকিৎসা করানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু ওই সময়ে আমাদের পরিবারে অভাব থাকায় ওর চিকিৎসাটা ঠিকভাবে চালিয়ে যেতে পারি নাই। এরপর বাবা মারা যাওয়ার পর আমরা অনেক কষ্ট করে পড়াশুনা করে এখানে আসছি। আর্থিক অসঙ্গতির সাথে ওর বর্তমান অবস্থার কারনে একসাথে থেকে ওর চিকিৎসা করানো আমাদের জন্য কঠিন।
এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামানের দৃষ্টি আকর্ষন করলে বলেন, উনি যদি মানসিক প্রতিবন্ধী হন তাহলে প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এছাড়া কেউ যদি ওর চিকিৎসার জন্য উদ্দোগ গ্রহন করেন, আমরা তাদেরকে সহযোগীতা করতে পারি।


এসএস/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৯:৫৯:৫৮ ● ৭৮৪ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ