মিলছেনা আপিলের সুযোগ বাউফলে মালিকের জেল খাটছেন শ্রমিক!

প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » মিলছেনা আপিলের সুযোগ বাউফলে মালিকের জেল খাটছেন শ্রমিক!
শুক্রবার ● ১ মে ২০২০


ইটভাটার শ্রমিক মো. তারেক খান।

পটুয়াখালী সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
অবৈধ ইটভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তর মালিকের সাজা না দিয়ে শ্রমিককে মালিক বানিয়ে ২০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মালিকের পরিবর্তে প্রায় দেড় মাস ধরে কারাগারে রয়েছেন সেই শ্রমিক। এমন ঘটনা ঘটেছে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ধানদী গ্রামের মেসার্স সিয়াম ইটভাটায়। ভাটাটির মালিক হলেন আবদুল আজিজ ওরফে কুট্রি মোল্লা। তাঁর বাড়ি একই ইউনিয়নের নাজিরপুর গ্রামে। অথচ এক শ্রমিককে মালিক ঘোষণা করে তাঁকে ওই সাজা দেওয়া হয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, লাইসেন্স ছাড়া ইট পোড়ানোর দায়ে ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৩’ অনুযায়ী ওই ভাটার মালিককে চলতি বছরের ১৯ মার্চ, বৃহস্পতিবার ২০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি পটুয়াখালী জেলা কারাগারে আছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্বে ছিলেন বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক আবদুল হালিম।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মালিক বানিয়ে যাকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে তিনি হলেন ওই ভাটার শ্রমিক। তাঁর নাম মো. তারেক খান। বয়স ২৮। তাঁর বাড়ি একই উপজেলার নওমালা ইউনিয়নের নওমালা গ্রামে। বাবার নাম আবদুল মতিন খান। ভাটার মালিক আবদুল আজিজ বলেন,‘আমি যে ভাটার মালিক তা সবাই জানে। আর আমিও তা স্বীকার করি। কিন্তু কি কারণে আমার শ্রমিককে মালিক বানিয়ে সাজা দেওয়া হয়েছে তা আমার জানা নেই।’ তিনি আরও বলেন, তারেক গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে শ্রমিক হিসেবে আমার ভাটায় যোগদান করে। খুবই ভালো স্বভাবের একজন মানুষ।

তারেকের বাবা আবদুল মতিন বলেন, ‘অন্যায়ভাবে আমার নিরপরাদ ছেলেকে সাজা দেওয়া হয়েছে। এই সাজার বিরুদ্ধে আপীল করার জন্য ওই সাজার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সইমোহর প্রয়োজন। যথাযথ নিয়মে সইমোহর পাওয়ার জন্য ২২ মার্চ আবেদন করা হয়েছে (স্মারক নম্বর ০৫.১০.৭৮০০.০১৪.০১.০২২.১৯-১৪৮)। কিন্তু পরিচালক সইমোহরের কাগজ দিতে গরিমসি করছেন।’ তিনি আরও বলেন, ২৩ মার্চ সোমবার সশরীরে তাঁর (পরিচালক) কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে সইমোহর দেওয়ার জন্য কান্নাকাটি করলে আসল মালিককে তাঁর (পরিচালক) সঙ্গে দেখা করতে বলেন। একপর্যায়ে পিয়ন ডেকে তাঁকে (মতিন) বের করে দেন।

তারেকের স্ত্রী ফারজানা আক্তার (২৩) মুঠোফোনে বলেন, ‘শ্রমিককে কেন মালিক বানিয়ে সাজা দেওয়া হল? আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’ তিনি আরও বলেন, আমার পাঁচ বছরের শিশু আবদুল্লাহ ওর বাবার সঙ্গে ঘুমাত। এখন বাবাকে ছাড়া ঘুমাতে চায় না। সারাক্ষণ বাবা বাবা বলে ডাকে আর কান্না করে।

তারেকের মা মোসা. নাছিমা বেগম (৫০) কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘বাবারা, তোমরা আমার নিরপরাদ ছেলেকে মুক্ত করে দাও।’

বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক আবদুল হালিম বলেন, ‘ভাটাটি অবৈধ। তাই যাঁকে উপস্থিত পাওয়া গেছে তাঁকেই মালিক হিসেবে ২০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’ তাহলে সাজার সইমোহর দিতে বিলম্ব হচ্ছে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সব বন্ধ। তাই সইমোহর দেওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে তারেকের বাবা আবদুল মতিন বলেন, তখন (২৩ মার্চ) লকডাউন কিংবা অফিস বন্ধ ছিল না। অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্যই সইমোহর আটকে রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:০০:১৮ ● ১২৬২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ