শনিবার ● ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
গোপালগঞ্জের শতাব্দী প্রাচীণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ‘বীণাপাণি যাত্রা পার্টি’
হোম পেজ » সর্বশেষ » গোপালগঞ্জের শতাব্দী প্রাচীণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ‘বীণাপাণি যাত্রা পার্টি’
![]()
হেমন্ত বিশ্বাস
যাত্রা বাংলাদেশের লোকসাহিত্যের একটি প্রাচীন ও ধারাবাহিক রূপ। এটি হলো কোনো লোকবিষয়কে নাট্যরূপে উপস্থাপন করা, যেখানে সঙ্গীত ও বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে অতিরিক্ত অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করে অভিনয় করা হয়। আঠারো শতক থেকে যাত্রার প্রসার হলেও উনিশ শতকে পৌরাণিক যাত্রা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। সাধারণ মানুষের বিনোদনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
এর ধারাবাহিকতায়, আজ থেকে শতাধিক বছর আগে, ১৩৩২ বঙ্গাব্দের পূর্বে গোপালগঞ্জের রঘুনাথপুর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বীণাপাণি যাত্রা পার্টি’। সম্প্রতি যাত্রাদলটির শতাব্দী প্রাচীণ একটি পান্ডুলিপি উদ্ধার করা হয়েছে যাত্রাদলের স্বত্ত্বাধিকারী শুকদেব মন্ডলের বাড়ি থেকে।
যাত্রাদলটির প্রাক্তন মালিক ছিলেন বিধুভূষণ মন্ডলের পরিবার। ম্যানেজার ছিলেন রঘুনাথপুরের স্বনামধন্য যাত্রাশিল্পী দেবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস এবং কোষাধ্যক্ষ ছিলেন সিলনা গ্রামের বেহালা-বাদক বেনী মাধব বসু। ১শ’ ৮ জন শিল্পী ও কলাকুশলীর মাধ্যমে গঠিত এই দলটি ১৯৪৭ সালের আগে ‘পনমুক্তি’, ‘দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণ’ ও ‘কাল-নাগিনী’সহ বহু জনপ্রিয় যাত্রাপালা পরিবেশন করেছিল। তবে দেশ বিভাজনের পর রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে কার্যক্রম মন্থর হয়ে একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায়।
সম্প্রতি শুকদেব মন্ডলের বড় ছেলে, বর্তমান সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক সুকান্ত মন্ডল, পারিবারিক ঐতিহ্য পুনর্জাগরণের উদ্যোগ নেন। তিনি তৎকালীন ম্যানেজার দেবেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সন্তান শিশির কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শিশির কুমার বিশ্বাসও এই যাত্রাদল পুনর্জাগরণের অঙ্গীকার করেন। পরে শিশির কুমার বিশ্বাসকে পরিচালক এবং ধীরেন্দ্রনাথ মন্ডলকে ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
যাত্রাদলটির সরকারিভাবে স্বীকৃতি পেতে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। জেলা কালচারাল অফিসার ফারহান কবীর সিফাতের সহযোগিতায় অক্টোবর মাসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদনপত্র বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগে জমা দেওয়া হয়।
বর্তমানে ওই বিভাগের আয়োজনের এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে বিজয়ের মাসজুড়ে যাত্রাপালা শুরু হয়েছে। দলটি নিবন্ধনের অডিশনের জন্য পুরো দল নিয়ে একটি যাত্রাপালা উপস্থাপন করবে। তারা ‘জেল থেকে বলছি’ বইখানি রিহার্সাল সম্পন্ন করেছে। আগামী ২৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকার সেগুনবাগিচা শিল্পকলা একাডেমিতে এই যাত্রাপালা মঞ্চস্থ হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০:৩২:৪৮ ● ৩৭ বার পঠিত
