শনিবার ● ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
মহিপুরে জোরপূর্বক তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তর ও চাঁদাবাজির অভিযোগ
হোম পেজ » কুয়াকাটা » মহিপুরে জোরপূর্বক তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তর ও চাঁদাবাজির অভিযোগ
সাগরকন্যা প্রতিবেদক, মহিপুর (পটুয়াখালী)
জোরপূর্বক ছেলেদের তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তর, চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে লতা হিজড়া নামের এক তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এ ঘটনা পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুরে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্য ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব কার্যক্রম চলছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মহিপুর থানা সংলগ্ন ওপদা বেড়িবাঁধের বাইরে লতা হিজড়ার নেতৃত্বে ৮ থেকে ১০ জন তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি একসঙ্গে বসবাস করেন। অভিযোগ রয়েছে, এদের মধ্যে কয়েকজনের স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। আরও অভিযোগ করা হয়, স্ত্রীস্বভাবের কিছু যুবককে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং পরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তর করে বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজিতে ব্যবহার করা হয়।
অভিযোগকারীদের দাবি, চাঁদাবাজি থেকে আদায়কৃত অর্থের বড় একটি অংশ লতা হিজড়া নিজে রাখতেন। এসব অর্থ দিয়ে তিনি অর্ধকোটি টাকার বেশি মূল্যের জমি কিনেছেন এবং কয়েক লাখ টাকা ব্যয়ে বসতঘর নির্মাণ করেছেন বলেও অভিযোগ ওঠে।
সম্প্রতি নুরজামাল নামের এক যুবককে মারধরের ঘটনায় এসব অভিযোগ নতুন করে আলোচনায় আসে। ভুক্তভোগী নুরজামালের ভাষ্য অনুযায়ী, অর্থের লোভ দেখিয়ে তাকে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং তার নাম রাখা হয় ‘মেঘলা’। দীর্ঘদিন তাকে বিভিন্ন এলাকায় চাঁদা তুলতে বাধ্য করা হয়। উত্তোলিত অর্থের ৬০ শতাংশ লতা হিজড়া নিতেন এবং বাকি ৪০ শতাংশ অন্য সদস্যদের মধ্যে বণ্টন করা হতো। দল ছাড়তে চাইলে তাকে মারধর করা হয় এবং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগীর স্বজনদের দাবি, গত ১৭ ডিসেম্বর রাতে তারা মহিপুর থানার সামনে লতা হিজড়ার বাসায় গিয়ে নুরজামালকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর অনুরোধ জানালে সেখানে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ সময় নুরজামালকে মারধর করা হয়।
স্থানীয় দোকানদার মজনু জানান, ১৭ ডিসেম্বর রাতে অর্ধউলঙ্গ অবস্থায় এক ব্যক্তি দৌড়ে এসে তার দোকানে আশ্রয় নেন। কিছুক্ষণ পর লতা হিজড়া ও তার লোকজন এসে ওই ব্যক্তিকে দোকান থেকে বের করে দিতে চাপ দেয়। এতে রাজি না হওয়ায় তাকে গালিগালাজ ও ভয়ভীতি দেখানো হয়।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী তাদের আচরণে আতঙ্কে রয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, মহিপুর থানাধীন ওই এলাকায় একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে ভয়ভীতি ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টি করে আসছে। দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন লতা হিজড়া। তিনি জানান, তার দলের সবাই তৃতীয় লিঙ্গের। নুরজামাল নামের ওই যুবকের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে বলে স্বীকার করলেও জোরপূর্বক রূপান্তর বা চাঁদাবাজির অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। সম্পদের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
এ বিষয়ে মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহব্বত খান বলেন, ঘটনাটি তাদের নজরে এসেছে। ভুক্তভোগী বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো ধরনের জোরপূর্বক বা অবৈধ কর্মকাণ্ড প্রমাণিত হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
এমই/এমআর
বাংলাদেশ সময়: ১১:৫৪:১২ ● ৫৫ বার পঠিত
