গৌরনদীতে ১০টাকা কেজির চাল বিত্তবানদের ঘরে!

প্রথম পাতা » বরিশাল » গৌরনদীতে ১০টাকা কেজির চাল বিত্তবানদের ঘরে!
বুধবার ● ২২ ডিসেম্বর ২০২১


গৌরনদীতে ১০টাকা কেজির চাল বিত্তবানদের ঘরে!

গৌরনদী (বরিশাল) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

 

বিগত সাড়ে ৫বছর ধরে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে  খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির (১০ টাকা কেজি দরে) চাল প্রায় এক হাজার বিত্তবান ও স্বচ্ছল সুবিধাভোগী গ্রহণ করে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারি বিধিমালা উপেক্ষা করে মৃত ব্যক্তি, পাকা ভবনের মালিক, প্রবাসী, বিত্তবান, এক ঘরে একাধিক কার্ড ও পক্ষের ভোটার এবং অন্য এলাকার বাসিন্দার নামে কার্ড ইস্যু করে বিতরণ ও চাল গ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কতিপয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের বিরুদ্ধে। ফলে এ কর্মসূচির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বহু হতদরিদ্র পরিবার।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানাগেছে, সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির (১০টাকা কেজি দরে চাল) আওতায় জনপ্রতিনিধিদের তালিকা অনুযায়ী ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নে  ১৯০৫টি, বার্থী ইউনিয়নে ১৮৩৮টি, চাঁদশী ইউনিয়নে ৭৯৯টি, মাহিলাড়া ইউনিয়নে ১০৮৭টি, বাটাজোর ইউনিয়নে ১৬৫২টি, নলচিড়া ই্উনিয়নে ১৫৫০টি ও শরিকল ইউনিয়নে ১৬৬০টি কার্ড ইস্যু করা হয়েছে।
সরেজমিনে স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানাগেছে, খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির  আওতায় উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের তালিকায় রয়েছে পার্শ্ববর্তী কালকিনি উপজেলার কালকিনি গ্রামের মৃত গনি ফকিরের ছেলে ১১৭নং কার্ডধারী মো. সাহেব আলী ফকির, একই গ্রামের মোকছেদ সরদারের ছেলে ১১৮নং কার্ডধারী ইমামুল ইসলামের নাম। একই ইউনিয়নের তালিকায় ১৫০০নং কার্ডধারী দেলোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী ১৩৯৬নং কার্ডধারী মোসাৎ নাছিমা  বেগম, বার্থী গ্রামের খলিল প্যাদার ছেলে ১৭১৫নং কার্ডধারী মো. আবুল কালাম আজাদ ও তার সহোদর ভাই সৌদি প্রবাসী ১৫১৯নং কার্ডধারী মো. আলামিন প্যাদা,  মৃত সিরাজুল হক প্যাদার ছেলে ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানে ছোট ভাই ১৩২৮নং কার্ডধারী মো. জাফর প্যাদা ও সৎ ভাই ১৪৯৩নং কার্ডধারী সুজন প্যাদার  নামে কার্ড ইস্যু করে বিতরণ করা হয়েছে। সুবিধাভোগীরা গত সাড়ে ৫ বছর ধরে ১০টাকা কেজি দরের (৩০ কেজি) চাল  গ্রহণ করে আসছে।
শরিকল ইউপির নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য সৈয়দ মিজানুর রহমান বাদশা  অভিযোগ  করে বলেন, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী শরিকল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি ও সদ্য সাবেক মেম্বার ফারুক হোসেন সরদার গত সাড়ে ৫ বছর পূর্বে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে (৩০কেজি) চালের একশত কার্ড ইস্যু করে বিতরণ করেন। এ তালিকায় মৃত নজরুল ইসলাম নজু খান, হাকিম খান এবং স্বজনপ্রীতি ও পক্ষপাতিত্ব করে সাবেক ইউপি সদস্য ফারুক সরদারের স্ত্রী ফরিদা বেগম, ফারুকের সহোদর ভাই জলিল সরদার, রিয়াজ সরদার, ভাতিজা সাগর সরদার, শ্যালক জাকির বেপারীর নামে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির কাড বরাদ্দ করান। এছাড়া  তার (ফারুক) ভোটার পাকা ভবনের মালিক (ধণাঢ্য) ইরাক প্রবাসী রাসেল  হাওলাদার, কুয়েত প্রবাসী শাহাদাত সরদার,  মালয়েশিয়া প্রবাসী সুমন চৌকিদার, ত্তিবান জব্বার প্যাদা, মিজাম শেখ, জাকির বেপারী, মিসায়েল হালদার, রিনা হালদারসহ ৪০/৫০টি কার্ড  (১০ টাকা চালের ) ইস্যু করে বিতরণ করেছে। এতে এ ওয়ার্ডের হতদরিদ্র অর্ধশতাধিক পরিবারকে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছেন।
বাদশা আরও বলেন, গত ১৫ নভেম্বর কাডধারীরা ১০ টাকা মূল্যের চাল গ্রহণের সময় এলাকাবাসীর আপত্তির মুখে ৬৬টি কার্ড জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে জব্দকৃত কার্ডগুলো গঠিত তদন্ত কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করেছি।
সদ্য সাবেক ইউপি সদস্য ফারুক সরদার অভিযোগ করে বলেন, নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য বাদশা তার সমর্থকদের মাঝে কার্ডগুলো বিতরণের জন্য জব্দ করেছিলো। এ ব্যাপারে ভূক্তভোগীরা গত ১৯ নভেম্বর ইউএনও’র বরাবরে লিখিত অভিযোগ করলে ইউএনও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব প্রদান করেন।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল বাসার বলেন, তদন্তে জব্দকৃত ৬৬টি কার্ডের মধ্যে ২ জন মৃত  ব্যক্তি, ৩ জন প্রবাসী, ২২ জন বিত্তবান ও ৩৯ জন বিভিন্ন ভাতাভোগীর নামে ইস্যু রয়েছে। স্বচ্ছভাবেই তদন্ত করে জব্দকৃত কার্ডগুলে ইউএনওর কাছে জমা দিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্চুক নবনির্বাচিত একাধিক জনপ্রতিনিধি জানান, স্বজনপ্রীতি ও পক্ষপাতিত্ব করে  অনেক জনপ্রতিনিধি উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে সরকারি বিধিমালা অমান্য করে   কিছু কার্ড বিতরণ করেছে।   শরিকলের ১নং ওয়ার্ডের মত তদন্ত করলে অনিয়মের ঘটনা বেরিয়ে আসবে।  তদন্ত করে বিত্তবানদের নামে বরাদ্দকৃত কার্ডগুলো বাতিল করে হতদরিদ্রদের মাঝে বিতরণের দাবি জানান তারা।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আশোক কুমার জানান, শরিকল ইউপির ২নং ওয়ার্ডে তিনি তদন্ত করে ৮টি কার্ড বাতিলের জন্য ইউএনওর কাছে সুপারিশ করেন। ইউপি চেয়ারম্যানদের দেওয়া নামের তালিকা অনুযায়ী কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের ৬৩টি ওয়ার্ডে তদন্ত করে তালিকা থেকে বিত্তবানদের নাম বাদ দেওয়া হবে বলে খাদ্য কর্মকর্তা আশোক কুমার জানান।
উপজেলা খাদ্য বান্দব কমিটির সভাপতি ও ইউএনও বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস জানান, ইস্যুকৃত কার্ডের তালিকা সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী যাচাই বাছাই’য়ের জন্য সাত ইউপি চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়া কেউ অনিয়মের অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে ইস্যুকৃত কার্ড বাতিল করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী শরিকল ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ইউএনও জানান।

এজেআর/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২১:৩৫:৩৭ ● ২০৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ