সরকারি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া রাজস্ব আদায়ে হিমশিম খাচ্ছে এনবিআর

প্রথম পাতা » জাতীয় » সরকারি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া রাজস্ব আদায়ে হিমশিম খাচ্ছে এনবিআর
শনিবার ● ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯


সরকারি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া রাজস্ব আদায়ে হিমশিম খাচ্ছে এনবিআর

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব বকেয়া পড়েছে। নানামুখী উদ্যোগ, চিঠি চালাচালি কিংবা অনুরোধ জানানো হলেও ওসব প্রতিষ্ঠান থেকে বকেয়া রাজস্বের অর্থ পাওয়া যাচ্ছে না। আবার সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এনবিআর অর্থ আদায়ে বিশেষ জোরাজুরিও করতে পারছে না। অথচ এনবিআরের কাঁধে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেয়া বিশাল রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চাপ রয়েছে। ওই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চিন্তিত এনবিআর সরকারি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া রাজস্বের অর্থ আদায়ে একাধিক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকের উদ্যোগ নিয়েছে। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারি ৫টি প্রতিষ্ঠানের কাছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বকেয়া পড়ে আছে ২৩ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা। তার মধ্যে কিছু বকেয়া অর্থ গত ১০ বছর ধরে ঝুলে আছে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার কাছে এনবিআরের বকেয়া রাজস্বেও পরিমাণ ১৯ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। বিগত ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত ওই পেট্রোবাংলার কাছে ওই বকেয়া পড়েছে। আর জ্বালানি তেল বিপণনের দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে বকেয়া রাজস্বের পরিমাণ ২ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে ১ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কাছে ২৬ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে বকেয়া রয়েছে ২৪৪ কোটি টাকা। তার মধ্যে পাসপোর্ট ও অন্য একটি প্রতিষ্ঠান ভ্যাট আদায়ই করেনি। ফলে চূড়ান্তভাবে ওই অর্থ তাদের মওকুফ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। কিন্তু পেট্রোবাংলা ও বিপিসি ভ্যাট আদায় করলেও তা সরকারের কোষাগারে জমা দেয়নি।
সূত্র জানায়, গত ৪ বছর ধরেই পেট্রোবাংলা ও বিপিসির বকেয়া অর্থ আদায়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোর সঙ্গে এনবিআরের বহু চিঠি চালাচালি ও বৈঠক হয়েছে। তার মধ্যে কিছু অর্থ পরিশোধও করা হয়েছে। বাদবাকি বকেয়া রাজস্ব কাগজে-কলমে প্রাপ্তি (বুক এডজাস্টমেন্ট) হিসেবে দেখানোর উদ্যোগ নেয় এনবিআর। অর্থাৎ ওই বকেয়া অর্থ এনবিআরের প্রাপ্তি হিসেবে দেখানোর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় হিসেবে দেখানো হবে। কিন্তু অডিট সংক্রান্ত কিছু প্রক্রিয়াগত জটিলতায় তাও আটকে আছে। এমন পরিস্থিতিতে ওসব অর্থের সুরাহা করতে সম্প্রতি অর্থ সচিব এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি পাঠিয়েছে এনবিআর। সর্বশেষ কয়েকদিন আগে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিবকে পাঠানো চিঠিতে এনবিআর চেয়ারম্যান বিশাল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিষয়টি উল্লেখ করে বিপিসির বকেয়া থাকা অর্থ পরিশোধের অনুরোধ জানিয়েছেন।
এদিকে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে এনবিআরকে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে প্রবৃদ্ধি মাত্র সাড়ে ৬ শতাংশ। নতুন অর্থমন্ত্রী রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা এখনো সংশোধন করে কমানোর আভাস দেননি। এমন পরিস্থিতিতে বকেয়া রাজস্ব আদায় করতে পারলে লক্ষ্যমাত্রা ও আদায়ে ঘাটতির ব্যবধান কিছুটা কমানোর সুযোগ পাবে এনবিআর।
অন্যদিকে সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিপুল রাজস্ব বকেয়া থাকা প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া জানান, অল্প কিছু বকেয়া টাকা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পরিশোধ করেছে। তবে দ্রুত ওই অর্থ আদায়ের লক্ষ্যে শিগগিরই জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং অর্থ বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। তাতে বিশেষ ব্যবস্থায় ওই অর্থ পরিশোধ করে সে অনুরোধ জানানো হবে। কারণ এনবিআরের বিশাল রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ৭:২৫:৪৫ ● ৫৪৪ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ