বেসরকারি পাটকল লাভে থাকলেও লোকসানে সরকারি পাটকল

প্রথম পাতা » জাতীয় » বেসরকারি পাটকল লাভে থাকলেও লোকসানে সরকারি পাটকল
বুধবার ● ২০ ফেব্রুয়ারী ২০১৯


লোকসানে সরকারি পাটকল

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে ভারত, সিরিয়া, ইরান, মিসর, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, সিরিয়া, ইরাক, থাইল্যান্ড, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পাট ও পাটপণ্য রফতানি হচ্ছে। কিন্তু দেশের চাহিদার মাত্র ২৪ শতাংশ পাটপণ্য সরকারি পাটকল পূরণ করতে পারে। চাহিদার বাকি ৭৬ শতাংশ পূরণ করে বেসরকারি পাটকলগুলো। ওসব পাটকল লাভের মুখ দেখলেও দীর্ঘদিন ধরে সরকারি পাটকলগুলো লোকসানে রয়েছে। টাকার অভাবে অনেক সরকারি পাটকল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিগত ৫ বছরে এ খাতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রায় হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ দেয়া হয়েছে। তারপরও টাকার অভাবে সময়মতো পাট কেনা যাচ্ছে না। মূলত অব্যবস্থাপনা, রাজনৈতিক দলাদলি, সময়মতো কাঁচাপাট কিনতে ব্যর্থ হওয়া, পাটের গুণগতমান ভাল না হওয়া, বেশি জনবল, সিবিএ’র দৌরাত্ম্য, পুরাতন যন্ত্রপাতি, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সরকারী পাটকলগুলো লাভের মুখ দেখছে না। সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে এ খাতকে উৎসাহ দেয়া হলেও সরকারি পাটকলগুলো লাভের মুখ তো দেখছেই না, উল্টো লোকসানের পরিমাণও কমাতে পারছে না। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মোট ৩০৭টি পাটকল রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ২৬টি। বাকিগুলো বেসরকারি মালিকানাধীন। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পাটের রফতানি বাড়ানো যায়নি। পাশাপাশি গতবছরের জুলাই থেকে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি কমেছে ২০ শতাংশের বেশি। ওই সময়ে ২ হাজার ৯১২ কোটি টাকার রফতানি লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তার ২৮ শতাংশও পূরণ হয়নি। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কাঁচাপাটের রফতানি কমেছে ৬১ শতাংশ, পাটের সুতা ২৩ শতাংশ ও অন্যান্য পাটপণ্য ৫৪ শতাংশ। তবে ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে এ হার কিছুটা বেড়েছিল। বর্তমানে দেশে বেসরকারি খাতে পাটকলের সংখ্যা জুট স্পিনিং মিলসহ সব মিলিয়ে ২২২টি। সবগুলোই চলছে ভাল। সরকারের পক্ষ থেকে ২০ শতাংশ রফতানি প্রণোদনা পেয়ে খুবই খুশি বেসরকারি পাটকল মালিকরা। কিন্তু সরকারি পাটকলগুলোতে তার কোন প্রতিফলন নেই।
সূত্র জানায়, ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশে ব্যক্তিমালিকানাধীন ও পরিত্যক্ত পাটকলসহ সাবেক ইপিআইডিসির ৬৭টি পাটকল তদারক, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) গঠিত হয়। পরে আরো পাটকল সরকারি করে বিজেএমসির আওতায় আনা হয় মোট ৮২টি পাটকল। কিন্তু ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ৪৩টি পাটকলকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ার পর সরকারের হাতে থাকে ৩৮টি পাটকল। কিন্তু ১৯৯৩ সালে বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শে পাট খাত সংস্কার কর্মসূচীর আওতায় আরো ১১টি পাটকল বন্ধ করে দেয়া হয়। বিগত ২০০২ সালে এশিয়ার বৃহত্তম আদমজী জুট মিল বন্ধ হয়ে যায়।
সূত্র আরো জানায়, স্বাধীনতার আগে থেকে দেশের পাটখাত চলছে। ১৯৬২, ১৯৬৪ ও ১৯৭৪ সালে করা অধ্যাদেশের ভিত্তিতেই চলছে পাটখাত। সংশোধিত অধ্যাদেশে পরিবর্তন, পরিমার্জনসহ কিছু সংযোজনও করা হয়েছে। তার মধ্য দিয়ে এর আইন যুগোপযোগী হয়েছে। স্বাধীনতা লাভের পর প্রথম ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে রফতানি আয়ের ৯০ শতাংশই ছিল পাটের অবদান। বর্তমানে রফতানি খাতে পাটের অবদান ২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে হার বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এদিকে সরকারি পাটকলের লোকসানের প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশন নেতারা জানান, সরকার পাট খাতের উন্নয়নে যেসব সুবিধা দিচ্ছে সরকারি পাটকলগুলো তার সুফল পাচ্ছে না। বিভিন্ন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পর্যন্ত সরকারি আদেশের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তা ঠেকিয়ে রাখছে। ফলে সরকারি পাটকল শ্রমিকরা দিন দিন উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। বারবার এ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেয়া হলেও ফল মিলছে না। এমনকি সরকারি পাটকল শ্রমিকদের জমানো গ্রাচ্যুইটির টাকাও খরচ করেছে পাটকল কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকরা অবসরে যাওয়ার সময় নিজেদের জমানো টাকা না পেয়ে আন্দোলনেও নেমেছিলেন।
অন্যদিকে নতুন সরকারের বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) দুর্নীতিবাজদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৬:০২:৩০ ● ৫৩১ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ