মঙ্গলবার ● ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বাতিল প্রক্রিয়া চলমান কলাপাড়ায় প্রবাহমান খাল কৃষিজমি দেখিয়ে শত শত বন্দোবস্ত

হোম পেজ » লিড নিউজ » বাতিল প্রক্রিয়া চলমান কলাপাড়ায় প্রবাহমান খাল কৃষিজমি দেখিয়ে শত শত বন্দোবস্ত
মঙ্গলবার ● ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯


কলাপাড়া পৌরশহরের চিংগরিয়াংর এ খালটি চাষযোগ্য কৃষি জমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত দেওয়ায় মানুষের ভোগান্তি চরম।

মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া থেকে॥
যেন গল্পের মতো। এখনও অন্তত ৬-৭ ফুট গভীর পানি। অথচ ৮৬-৮৭ সালে চাষযোগ্য কৃষিজমি দেখিয়ে (এক একর ৫৫ শতক) ব্যবসায়ী রবিন্দ্র নাথ হাওলাদারকে বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। এসএ নক্সায় এখনও ৮৪২ নম্বর দাগটি খাল রয়েছে। বাস্তবেও তাই। ভূমি অফিসের চরম এক দুর্নীতির কারনে খালটির দুই পাড়ের শত শত পরিবার এখন চরম ভোগান্তির কবলে পড়েছেন। বন্দোবস্ত গ্রহীতা খালের মধ্যে তিনটি বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে দিয়েছে। মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক ১৯৯৩ সালের ৫ ডিসেম্বর জেলা কৃষি খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত কমিটির মাধ্যমে এ কেসটি বাতিল করে দেয়। ’৯৩ সালের এক তদন্ত প্রতিবেদনে তৎকালীন জেলা প্রশাসক উল্লেখ করেছেন, বিধি বহির্ভূতভাবে জনসাধারনের ব্যবহার্য রেকর্ডীয় খালের জমির শ্রেণি গোপন করে নাল জমি হিসাবে বন্দোবস্ত প্রদান করায় এ বন্দোবস্ত কেসটি বাতিল করা হইল এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে উল্লেখিত জমি সরকারের খাস দখলে এনে রেকর্ড সংশোধনের আদেশ দেয়া হয়। পরবর্তীতে আদালতে মামলা করলে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে খতিয়ানটি ২০১১ সালে আবার বাতিলের আদেশ প্রত্যাহার করে পুনর্বহাল করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এখনও খালটিতে বুক সমান পানি বিদ্যমান। স্থানীয় বাসিন্দা খেপুপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমানউল্লাহ মিয়া জানান, এই খালটি এখন জনস্বার্থে সচল না করলে আশপাশের মানুষ স্থায়ী জলাবদ্ধতায় আটকে যাবে। মহল্লার মানুষ বসবাস উপযোগিতা হারিয়ে ফেলবে। বর্তমানে ময়লা-আবর্জনা আটেক যায়। খালটির সঙ্গে আন্ধারমানিক নদীর স্লুইস খালের সংযোগ রয়েছে। জালিয়াতি, দুর্নীতির মধ্য দিয়ে খালকে কৃষিজমি দেখানো হয়েছে। মাত্র ৭৭৫ টাকার সেলামিতে এ খাল বন্দোবস্ত নিয়ে এখন কোটি টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তাও কয়েকটি বাঁধ দিয়ে পকেট করার মধ্য দিয়ে। রহমতপুরের একাংশ এবং কবি নজরুল ইসলাম সড়কের বাসিন্দারা এখালটি রক্ষায় আন্দোলনে নেমেছেন। লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। মানব বন্ধন করেছেন। সর্বশেষ বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি’র (বেলা) নির্বাহী প্রধান, সুপ্রীম কোর্টের এ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান খালটি রক্ষায় একটি লিগ্যাল নোটিশ করেছেন। ২০১৬ সালের ২৮ নবেম্বর এ নোটিশ দেয়া হয়। তখন ভূমি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, পরিবেশ ও বন, পানিসম্পদ, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের সচিবগণ, পরিবেশ অধিদফতর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার কলাপাড়া, কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে এ নোটিশ দেয়া হয়। নোটিশে চিঙ্গরিয়ার খালটির পানির মূল ¯্রােতধারা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। জনস্বার্থে খালটি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সবাই ব্যর্থ হয়েছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
শুধু ওই একটি খাল নয়, একইভাবে ধুলাসার ইউনিয়নের কাছারির খালটিতে এখনও ৬-৭ ফুট পানি বিদ্যমান। শাপলা ফোটে। বর্ষায় পানিতে টই-টুম্বুর থাকে। সেখানেও ১২ ব্যক্তিকে ’৮০ এর দশকের মাঝামাঝি খালকে চাষযোগ্য কৃষিজমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। এ খালের পানিতে আশপাশের গ্রামের মানুষ চাষাবাদ করে আসছেন। দুই বছর আগে খালটি আঁড়াআঁড়ি বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ আটকে দেয়। এমনকি টিয়াখালী-নিশানবাড়িয়া দোন নদী পর্যন্ত কৃষি জমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। যেখানে ইটভাঁটা করা হয়েছে। নাচনাপাড়া মহল্লায় এমনটি দেখা গেছে। আন্ধারমানিক নদীর যে স্পটে মিঠাগঞ্জ মৌজা এলাকায় জোয়ারের পানি প্রবাহমান সেখানটা চাষের জমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। ৫৩০ কে/১৯৮৬-১৯৮৭ নম্বর বনেন্দোবস্ত কেস বাতিলের প্রার্থনা করেন এলাকার লোকজন। এর প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসের এক তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ওই বন্দোবস্ত কেসের ২৭১১/৩৩৮১ দাগের জমি রেকর্ডে খাল শ্রেণির। বর্ষা মৌসুমে ওই খালে পানি চলাচল করে। অথচ ৮৭ সালে চাষযোগ্য কৃষিজমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত দেয়া হয়। এ বন্দোবস্ত কেসটি বাতিল করে দেয়া হয়। কিন্তু বন্দোবস্ত গ্রহীতা মামলা করেছেন। এমনকি একজনের বাড়িঘর রয়েছে। স্কুল রয়েছে। ওই খাস জমি অন্যকে চাষযোগ্য কৃষিজমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। ১৫৮-কে/২০১০-২০১১ বন্দোবস্ত কেসে এমনটি দেখা গেছে। মিঠাগঞ্জের বাইশাখলা গ্রামে এ জমির অবস্থান। এটির এখন দাগ সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। মোট কথা ভূমি প্রশাসনের এমন শত শত খাল চাষযোগ্য কৃষিজমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত দেয়ায় এনিয়ে এখন কৃষিকাজের প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় ভূক্তভোগীদের সঙ্গে মামলা-হাঙ্গামায় জড়িয়ে পড়ছে বন্দোবস্ত গ্রহিতা ব্যক্তিগণ। স্থানীয় কৃষকের দাবি যে কোন মূল্যে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে যেসব খাল শ্রেণিকে চাষযোগ্য দেখিয়ে বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে তা বাতিল করা হোক। নইলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি কৃষিকাজেও মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দিবে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) অনুপ দাশ জানান, যেসব অনিয়ম পরিলক্ষিত ইতোমধ্যে হয়েছে তা বাতিল প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। কৃষকের সমস্যা হয় এবং ত্রটিপুর্ণ বন্দোবস্ত কেস তদন্ত স্বাপেক্ষ বাতিল করে সরকারি খাল নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১:০৪:২০ ● ৫৮৫ বার পঠিত