শনিবার ● ২৫ মে ২০১৯

বাউফলে শতভাগ বিদ্যুতায়ণের সুযোগে চলছে খুটি বাণিজ্য

হোম পেজ » সর্বশেষ » বাউফলে শতভাগ বিদ্যুতায়ণের সুযোগে চলছে খুটি বাণিজ্য
শনিবার ● ২৫ মে ২০১৯


বাউফলে শতভাগ বিদ্যুতায়ণের সুযোগে চলছে খুটি বাণিজ্য

বাউফল (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

বাউফলে বিদ্যুতায়ণের নামে লাগামহীন ভাবে চলছে খুঁটি বাণিজ্য। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন দালাল খুঁটি আনা এবং স্থাপণের নামে সংশ্লিষ্ট আবেদনকারী গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করে নিচ্ছে ৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। যে সকল আবেদনকারী গ্রাহকরা টাকা দিতে চাচ্ছেন না, নানা অজুহাতে তাদের নামের খুঁটি বসানো হচ্ছেনা। এক কথায় ওই দালালদের কাছে আবেদনকারীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে।
সূত্র জানায়, এখনো পর্যন্ত বাউফলে প্রায় ৯০ ভাগ বিদ্যুতায়ণ হয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়ণের লক্ষ্য নিয়ে বর্তমানে ৩০টি প্যাকেজের মাধ্যমে বাউফলে ৩৬০ কিলোমিটার বিদ্যুতায়ণের জন্য প্রায় সারে ৬ হাজার খুঁটি স্থাপণের কাজ চলছে। কালাম সিকদার, কালাম মুন্সি, মাহাবুব মিয়া, রেজাউল করিম, মিলন মিয়া, সমির বাবু নামের কয়েকজন ঠিকাদার ওই কাজ করছেন। প্রতি প্যাকেজে প্রায় ৩০ লাখ টাকা হারে ৯ কোটি টাকার কাজ হচ্ছে। এই বিদ্যুতায়ণের কাজ করতে গিয়ে ছিদ্দিক, সেলিম ভূঁইয়া, আবু হানিফ, রিয়াজ উদ্দিন রিপন, লোকমান গাজী, ছালাম হাওলাদার, মিজানুর রহমান হিরন, মো. হাফিজুর ডাক্তার সহ প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন দালাল কাজ করছে।  বাউফলের কেশবপুর, নাজিরপুর, কাছিপাড়া, কালিশুরী, ধুলিয়া, আদাবাড়িয়া, কালাইয়াসহ প্রায় সকল ইউনিয়নেই একজন কিংবা দুইজন করে দালালের আর্বিভাব ঘটেছে। ওই দালালরা প্রতি প্যাকেজের আবেদনকারী গ্রাহকদের থেকে এক খুঁটির জন্য সর্বনি¤œ ৫ হাজার এবং দুই বা তিন খুঁটির জন্য ২৫ হাজার কিংবা তারও বেশি  টাকা আদায় করে নিচ্ছেন। এভাবে বাউফলে লাখ লাখ টাকার খুঁটি বাণিজ্য চলছে। খুঁটি আনা এবং স্থাপণের জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এবং অফিসকে ওই টাকা দিতে হবে বলে দালালরা গ্রাহকদের জানান। অথচ দরপত্রের মধ্যেই খুঁটি আনা এবং স্থাপণের খরচ ধরা রয়েছে। কেশবপুর ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী ইদ্রিছ মিয়ার কাছে তিন খুঁটির জন্য ৩৫ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। একই ইউনিয়নের বজলু মিয়ার কাছে এক খুঁটির জন্য ১২ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। মেহেন্দীপুর বাজারের অরুন দাসের কাছে এক খুঁটির জন্য ৮ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। আমির হোসেন কাজী নামের এক ব্যাক্তির থেকে ২৫ হাজার, পারভেজের থেকে ৬ হাজার, আফজালের থেকে ৬ হাজার এবং সাইফুলের থেকে ৮ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে। এভাবে ওই ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক আবেদনকারীদের থেকে টাকা নেয়া হয়েছে এবং এবং বাকি আবেদনকারীদের কাছে টাকা চাওয়া হয়েছে। টাকা না দিলে তাদের খুঁটি নানা অজুহাতে স্থাপণ করা হচ্ছে না। স্থানীয় দালাল  ছিদ্দিক এবং সেলিম ভূঁইয়া ওই টাকা আদায় করছেন বলে আবেদনকারীরা জানান।
অপরদিকে, উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নের আবেদনকারীদের থেকে দালালরা ইতিমধ্যেই কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকায় সাধারন মানুষ দালালদের বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে সাহস পাচ্ছেননা। বাউফল পল্লী বিদ্যুতের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার একে আযাদ জানান, দালালদের খবর তাদের কাছে থাকলেও মূল কাজটা ঠিকাদারের হওয়ায় তাদের কিছু করার নেই। কালাম মুন্সি নামের এক ঠিকাদার দালালদের দৌরত্বে কথা স্বীকার করে জানান, তার কাজে কোন দালালি নেই। তবে যারা এই কাজে দালালি করছে এবং সাধারন মানুষকে ধোকা দিয়ে টাকা আদায় করছে তাদের নাম অনতিবিলম্বেই পুলিশের কাছে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বাউফলের সূধী মহল মনে করছেন, সকল ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে উদ্যোগ সেটাকে নস্যাৎ করছে এই দালাল চক্র এবং ঠিকাদার। তাদের মতে, ঠিকাদাররা কাজ হাতে নিয়ে বাস্তবায়নে গরিমসি করছে এবং তাদেরই করে দেয়া সুযোগ দালাররা কাজে লাগাচ্ছে। এরফলে সাধারন মানুষ হয়রানি এবং আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

 

এপি/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৮:২৯:০১ ● ৪০৪ বার পঠিত