শুক্রবার ● ৫ ডিসেম্বর ২০২৫
বিজয়ের পথে ৫ ডিসেম্বর যুদ্ধক্ষেত্রে সাফল্য, কূটনীতিতে পাকিস্তানের পতন
হোম পেজ » মুক্তিযুদ্ধ » বিজয়ের পথে ৫ ডিসেম্বর যুদ্ধক্ষেত্রে সাফল্য, কূটনীতিতে পাকিস্তানের পতন

মো. মহসীন খান
ডিসেম্বর বাঙালির জীবনে অহংকারের মাস। দিকে দিকে উড়তে থাকে বিজয়ের পতাকা। মহান বিজয়ের মাস- এ মাসেই একে একে মুক্ত হতে থাকে শত্রুকবলিত বাংলার গ্রাম-গঞ্জ-শহর-বন্দর। প্রতিদিনই নতুন নতুন মুক্ত এলাকায় উত্তোলিত হয় বিজয়ের পতাকা। বাঙালির বিজয়, পাকিস্তান ও রাজাকারদের পরাজয়ের মাস।
৫ ডিসেম্বর, শুক্রবার। ১৯৭১ সালের এই দিনে পরাজয় নিশ্চিত জেনে কূটকৌশলের আশ্রয় নেয় পাকিস্তান সরকার। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের দৃষ্টিতে রাজনীতির নতুন প্রেক্ষাপট হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। একে একে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের সব বন্ধু হারাতে থাকে পাকিস্তান। অন্যদিকে সম্মুখযুদ্ধে ধারাবাহিক পরাজয়ে পাক হানাদার বাহিনীর পায়ের তলা সরে যেতে থাকে। পাকিস্তানি সামরিক বিশারদরা পরিণতি আঁচ করে মাঠের যুদ্ধের পাশাপাশি কূটনৈতিক চাল শুরু করে।
বাঙালির স্বাধীন মাতৃভূমির লড়াইকে আড়াল করতে ইয়াহিয়া খান ঘোষণা দেন, ‘পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হয়েছে।’ কিন্তু ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচার মুক্তিযুদ্ধের অগ্রযাত্রাকে থামাতে পারেনি। মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন অঞ্চল শত্রুমুক্ত করে ঢাকার দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। এদিকে জাতিসংঘে শুরু হয় নানামুখী তৎপরতা।
৪ ডিসেম্বর নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের প্রেক্ষাপটে সোভিয়েত ইউনিয়ন আরেকটি প্রস্তাব আনে। সেখানে বলা হয়, “পূর্ব পাকিস্তানে এমন রাজনৈতিক নিষ্পত্তি প্রয়োজন, যার স্বাভাবিক ফল হিসেবে চলমান সংঘর্ষের অবসান ঘটবে।” পোল্যান্ড এ প্রস্তাবে সমর্থন দেয়, চীন ভেটো দেয়, অন্যরা ভোটদানে বিরত থাকে।
এ সময় গভর্নর ডা. মালিক দেশবাসীর কাছে সাহায্যের আবেদন জানান। ৫ ডিসেম্বর তিনি বলেন, দেশ আক্রান্ত; ভারতীয়দের সহযোগিতায় কিছু বিশ্বাসঘাতক আক্রমণ করেছে। সেনাবাহিনী প্রতিরোধ করছে, তাই প্রতিরক্ষা তহবিল গঠন করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর আহ্বানে কেউ সাড়া দেয়নি।
এই দিনে ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ভারতীয় বিমানবাহিনী বাংলাদেশের পাক ঘাঁটিগুলোর ওপর বারবার আক্রমণ চালায়। ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদীর দক্ষিণ তীরে জামালপুরে অবস্থিত পাক ব্রিগেড সদর দপ্তর ধ্বংস করে দেয়। পাক বিমানবাহিনী কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। পাকিস্তানের প্রায় ৯০টি সামরিক যান এবং জামালপুরের কাছে পলায়নরত পাক সেনাদের ওপর বোমাবর্ষণ করা হয়।
মুক্তিবাহিনীর দৃঢ়তা, ভারতীয় সেনা ও বিএসএফের সহযোগিতায় এ দিনে বাংলাদেশের রণাঙ্গনে আসে উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
- চলবে
লেখক: শিক্ষক ও সাংবাদিক
বাংলাদেশ সময়: ১২:০৯:০৪ ● ২৭ বার পঠিত
