মঙ্গলবার ● ৩০ জুলাই ২০২৪

কোটা আন্দোলনে নিহত চরফ্যাশনের ৫পরিবারে শোকের মাতম

হোম পেজ » ব্রেকিং নিউজ » কোটা আন্দোলনে নিহত চরফ্যাশনের ৫পরিবারে শোকের মাতম
মঙ্গলবার ● ৩০ জুলাই ২০২৪


চরফ্যাশনের ৫পরিবারে শোকের মাতম

চরফ্যাশন (ভোলা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

কোটা সংসারের দাবীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকাতে শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে চরফ্যাশন উপজেলার মোট ৫ জন নিহত হয়েছেন। চরফ্যাশনের বিভিন্ন থানা পুলিশের তথ্য মতে এই সংবাদ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, কোটা আন্দোলনে বুধবারে কিশোর মো. সিয়াম (১৫), বৃহস্পতিবারে যুবক হোসেন (২৫) ও শুক্রবারে কিশোর বাহাদুর হোসেন মনির (১৬), কিশোর সোহাগ (১৫) ও যুবক মোঃ হাছনাইন আহম্মেদ (২৬) সহ মোট ৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে। সিয়াম চরফ্যাশন উপজেলার ওসমানগঞ্জ ৪নং ওয়ার্ডের
জিয়ারুল হকের ছেলে, হোসেন দুলারহাট থানার নীলকমল ২নং ওয়ার্ডের মৃত জাফরের ছেলে, বাহাদুর হোসেন মনির শশীভূষণ থানার রসুলপুর ৪নং ওয়ার্ডেও জাফর মাঝির ছেলে, সোহাগ শশীভূষণ থানার হাজারীগঞ্জ ৬নং ওয়ার্ডের স্বপনের ছেলে ও মোঃ হাছনাইন আহম্মেদ দক্ষিণ আইচা থানার নজরুল নগর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের আলমগীর হোসেন মালের ছেলে। নিহত ৫জনকেই স্ব-স্ব গ্রামের বাড়ীতে চরফ্যাশনের তাদের পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়েছে। নিহতের খবর শুনে পুরো উপজেলার ৫ গ্রামে শোকে পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও তাদের বাড়ীতে বাড়ীতে চলছে শোকের আহাজারি। আহাজারিতে আকাশ বাতাশ যেন ভারি হয়ে উঠেছে।
উপজেলার ওসমানগঞ্জ ৪নং ওয়ার্ডের নিহত সিয়ামের মা আঞ্জুরা বেগম জানান, সিয়ামের বাবা জিয়ারুল হক পাটওয়ারী অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে কোন রকম জীবন পার করছিল। ছেলে সিয়াম ৮ম শ্রেণীর ছাত্র। সংসারে অভাব অনটন দেখে সিয়াম গত রোজার ঈদের পরে কাজের জন্য ঢাকাতে যান। সিয়াম ঢাকার গুলিস্তানের
ফুটপাতে একটি ব্যাটারির দোকানে কাজ করছিল । সিয়াম ঈদুল ফিতরের ছুটিতে গ্রামে এসে ২৯ জুন আবার ঢাকাতে চলে যায়। ১৭ জুলাই বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সিয়াম দোকান বন্ধ করার পর আমার সাথে তার কথা হয়েছিল। যাত্রাবাড়ীর মাতুইয়ালে ব্রীজের পাশে মেডিকের সংলগ্ন একটি ভাড়া বাড়ীতে সিয়াম বসবাস করেছিল। বাসায় ফেরার পথে যাত্রাবাড়ীর হানিফ ফ্লাইওভারে আন্দোলন কারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে সিয়াম গুলিবিদ্ধ হয়। ওই সময় সিয়াম গুলিবিদ্ধ হলে সিয়ামের সাথে থাকা সাকিব নামের আরেকজন সিয়ামের খালাতো ভাই রাসেলকে খবর দেয়। রাসেল ঘটনাস্থল থেকে সিয়ামকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসলে মেডেকিলের সামনে তার মৃত্যু হয়। দুই ভাইয়ের মধ্যে সিয়াম ছিলো বড়। বড় ছেলেকে হারিয়ে এখনো শোকে কাতর তার বাবা-মা। নিহত হোসেনের স্ত্রী হাসিনুর বেগম ও তার মা রিনা বেগম জানান, নিহত হোসেন পেশায় একজন ট্রাক ড্রাইভার ছিলো। দুই কন্যা সন্তান, মা ও স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকার মোহাম্মদ এলাকার লাউতলা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করত। ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার রাত ৩ টার দিকে হোসেন মোহাম্মদপুর চাঁদ উদ্যান গেটে ট্রাক বন্ধ করে বাসায় যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। পরদিন তাকে গ্রামের বাড়ী নীলকমল ২নং ওয়ার্ডে এনে দাফন করা হয়। তার স্ত্রী হাসনুর বেগম আরো জানান, পরিবারে আয়-রোজগার করার মতো হোসেন ছাড়া আর কেউ নেই। হোসেনের মৃত্যুতে দুই সন্তানের ভবিষ্যাত
এখন অনিশ্চিত। বাবাকে হারিয়ে আকলিমা (৫) ও সিমা (৩) নামের দুই সন্তান এখন বাকরুদ্ধ। আমি সরকারের কাছে আমার স্বামীর এই হত্যাকান্ডের বিচারের দাবী করছি।
নিহত বাহাদুর হোসেন মনিরের বাবা জাফর মাঝি জানান, চার ভাইয়ের মধ্যে মনির সবার ছোট। সে পেশায় একজন ইলেক্ট্রনিক্স মেস্ত্রী ছিলো। ঢাকার নুরসালা এলাকাতে সহপরিবার নিয়ে বসবাস করি। মনির ১৯ জুলাই শুক্রবার আছর নামাযের পরে গুলশান নতুন বাজার যায়। বাড্ডার নতুন বাজার এলাকাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে যেকোন একজন মৃত্যু হয়েছে এই খবর পেয়ে তার ফুফাতো ভাই হাছনাইন আহম্মেদ ঘটনাস্থল গিয়ে দেখে তার মামাতো ভাই মনিরের মরদেহ পরে আছে। তার মরদেহ দেখতে পেয়ে হাসনাইন আমাকে খবর দেয়। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে
হাছনাইন আহম্মদসহ মনিরের মরদেহ উদ্ধার করে গ্রামের বাড়ীতে এনে শনিবার দুপুরে দাফন করি। পরিবারের ছোট ছেলেকে হারিয়ে নেমে এসেছে শোকের ছাঁয়া। এসময় মনিরের বাবা জাফর মাঝি সরকারের কাছে এরকম নির্মম হত্যাকান্ডের বিচারের দাবী জানান।
নিহত সোহাগের বাবা কৃষক স্বপন জানান, সোহাগ ঢাকার রামপুরা বাসতলা এলাকাতে বসবাস করত। সে রামপুরা এলাকাতে ফুটপাতে জামা-কাপড়ের ব্যবসা করছিল। ১৯ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যায় তার দোকানটি দেখার জন্য সে রাস্তায় বের হয়েছিল। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। এসময় স্থানীয় এক যুবক সোহাগের মামা আবুল কাশেমকে খবর দিলে সে ঘটনাস্থলে এসে সোহাগের মরদেহ উদ্ধার করে গ্রামের বাড়ীতে এনে দাফন করেন।
নিহত মোঃ হাছনাইন আহম্মেদ এর স্ত্রী রুমা বেগম জানান, তার স্বামী হাছনাইন পেশায় একজন “আকাশ” কম্পানির ডিস ব্যবসায়ী ছিলেন। হাছনাইন স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। তার স্বামী ১৯ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যায় ব্যবসায়ীক কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এসময় স্থানীয়রা হাছনাইনের ছোট ভাই হোসেনকে খবর দিলে হোসেন হাছনাইনের মরদেহ উদ্ধার করে তার পরদিন শনিবার গ্রামের বাড়ীতে নিয়ে আসেন। তাদের পারিবারিক কবরস্তানে হাছনাইনকে দাফন করা হয়। হাছনাইনের পরিবারের শোক যেন থামছেই না। স্বামীকে যারা হত্যা করেছে সরকারের কাছে তাদের বিচারের দাবী জানান স্ত্রী রুমা বেগম।
এই বিষয়ে চরফ্যাশন, দুলারহাট, শশীভূষণ ও দক্ষিণ আইচা থানার অফিসার ইনচার্জগণ এই প্রতিবেদকের কাছে কোন মন্তব্য করেন নাই।
সহকারী পুলিশ সুপার (চরফ্যাশন সার্কেল) মোঃ মেহেদী হাসান সাংবাদিকদেরকে জানান, ঢাকায় নিহত চরফ্যাশনের ৫ পরিবারের কেউই স্ব-স্ব থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করেনি।

এএইচ/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২২:৫০:৪০ ● ২২৫ বার পঠিত