শুক্রবার ● ২১ নভেম্বর ২০২৫
কুয়াকাটার আলীপুরে হ্যাচারির দখলে পাউবোর জমি, শ্মশানের পথ বন্ধ
হোম পেজ » লিড নিউজ » কুয়াকাটার আলীপুরে হ্যাচারির দখলে পাউবোর জমি, শ্মশানের পথ বন্ধ
সাগরকন্যা প্রতিবেদক, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)
কুয়াকাটার আলীপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জমি দখল করে আলীপুর চিংড়ি হ্যাচারি লিমিটেড বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করেছে। এতে প্রায় ৬০ বছরের পুরানো হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্মশানের প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকদিন ধরে হ্যাচারির কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মূল গেটে সবসময় তালা ঝুলে থাকে। এতে মরদেহ সৎকারে বড় ধরনের ভোগান্তিতে পড়ছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। একই সঙ্গে বেহাত হচ্ছে ৪৮ নং পোল্ডারের পাউবোর জমি। কিন্তু পাউবো কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জমি উদ্ধারে কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রের অদূরে মহিপুর থানাধীন লতাচাপলী ইউনিয়নের আলীপুর স্লুইসগেট সংলগ্ন এলাকায় পাউবোর জমি ও শ্মশানের জায়গা দখল করে হ্যাচারি স্থাপন করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এতে ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
অভিযোগ রয়েছে, কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা এবং লতাচাপলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আনছার উদ্দিন মোল্লার আপন ভাই আবুল হোসেন মোল্লা এই দখলদারির নেতৃত্বে ছিলেন। এর সঙ্গে রয়েছেন আলীপুর মৎস্যবন্দরের ব্যবসায়ী হাজী আবুল কালাম হাওলাদার, হাজী নজরুল ইসলাম, হাজী আবুল হোসেন ভূইয়া, শহিদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন। তাদের প্রভাবের কারণে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতেও সাহস পাচ্ছেন না।
মৎস্য বন্দর মহিপুর-আলীপুরের মধ্যখান দিয়ে বয়ে যাওয়া খাপড়াভাঙ্গা নদী। এই নদীর তীর ঘেষে আীপুর স্লুইসগেট ও নাইউড়ীপাড়ার মধ্যবর্তী স্থানে অন্তত ৬০ বছর আগের শ্মশানের প্রায় ৩০ শতাংশ জমি হ্যাচারি দখলে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এখন ওই শ্মশানের জন্য বিএস রেকর্ড আছে মাত্র দেড় শতাংশ জায়গা। অপরদিকে ১ দশমিক ৬৬ শতক জমি কিনেও প্রভাবশালীরা দখলে রেখেছেন প্রায় ৩ একর সম্পত্তি।
সম্প্রতি মরদেহ সৎকারে শ্মশানের একমাত্র প্রবেশপথে তালা থাকায় চরম ভোগান্তির মুখে পড়েন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। প্রায় দুই ঘণ্টা বিক্ষোভের পর হ্যাচারি কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে পথ খুলে দেয়।
স্থানীয় বাসিন্দা পলাশ বলেন, অনেকদিন ধরে শ্মশানের পথ খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। কিন্তু হ্যাচারি কর্তৃপক্ষ কোনো সহযোগিতা করছে না। আমরা শ্মশানের জমি দখলমুক্ত চাই।
আলীপুর বাজারের ব্যবসায়ী উত্তম ঘোষ বলেন, লতাচাপলী ও কুয়াকাটা এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য এটি একমাত্র শ্মশান।জায়গাটি দখলে যাওয়ায় আমরা ধর্মীয় সংকটে পড়েছি। ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত হ্যাচারি মালিক মো. আবুল হোসেন ভূইয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা শ্মশানের জমি দখল করিনি। নিয়ম মেনে জমি কিনে হ্যাচারি করেছি। পাউবোর জমিতে আমরা মাছ চাষ করি না, শুধু বাউন্ডারি দিয়েছি।
তবে একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি অভিযোগ করেন, হ্যাচারির মালিকপক্ষ পাউবোর জমি ব্যবহার করেই মাছ চাষ করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ আলম সাগরকন্যাকে বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরকারি জমি দখল করে স্থাপনা করার সুযোগ নেই। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার হামিদ বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত সরেজমিনে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:৩১:৩৬ ● ১০৩ বার পঠিত
