
মঙ্গলবার ● ২২ এপ্রিল ২০২৫
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণে অনিয়ম কাউখালীতে ঠিকাদারসহ ৩প্রকৌশলীর নামে দুদকের মামলা
হোম পেজ » পিরোজপুর » স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণে অনিয়ম কাউখালীতে ঠিকাদারসহ ৩প্রকৌশলীর নামে দুদকের মামলাকাউখালী(পিরোজপুর}সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে আওয়ামীলীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের ভাই ঠিকাদার নাসির উদ্দিন লিটুর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দায়েরকৃত মামলায় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তিন প্রকৌশলীকে আসামি করা হয়েছে। তবে সব আসামিই পলাতক রয়েছেন।
দুদকের উপ-সহকারীপরিচালক মো.মোয়াজ্জেম হোসেন স¤্রাট সোমবার (২১ এপ্রিল) পিরোজপুর জেলা সমন্বিত কার্যালয়ে এই মামলা দায়ের করেছেন। আসামিরা হলেন- পিরোজপুর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাবেক সহকারী প্রকৌশলী বজলুর রহমান খান, বরিশালের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী দুলাল চন্দ্র সরকার, সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী শৈলে›ন্দ্র নাথ মন্ডল, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নূরী এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী নাসির উদ্দিন লিটু।
আসামিদের মধ্যে বজলুর রহমান খান অবসরে গেছেন। দুলাল চন্দ্র সরকার খুলনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্বে রয়েছেন। শৈলেন্দ্র নাথ মন্ডল ঝালকাঠীতে সহকারী প্রকৌশলীর পদে রয়েছেন। কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ শয্যা হতে ৫০ শয্যায় উন্নীত করণ প্রকল্পের ঠিকাদার লিটু বরিশাল নগরীর খিরোদ মুখার্জী লেনের বাসিন্দা।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পিরোজপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে উপজেলা কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যার চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করে। ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করণের লক্ষ্যে ২০০৮ সালে সাড়ে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০০৮ সালের ২৫জুন নতুন ভবন নির্মাণের জন্য নানকের ভাইয়ের ঠিকাদার ‘মেসার্স নূরই এন্টারপ্রাইজ’ প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। সেই প্রকল্পে দুটি আবাসিক ও একটি বহির্বিভাগ ভবন নির্মাণের কথা ছিল।
কার্যাদেশ অনুযায়ী ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০ সালের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
নানকের ভাইয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নকশা-প্রাক্কলন অনুসরণ না করে ভবন তিনটি নির্মাণ কাজ শুরু করেন। কিন্তু ঠিকাদার প্রায় ২০ শতাংশ কাজ করে তা ফেলে রাখেন। পাশাপাশি ওই কাজের বিপরীতে এক কোটি ৩৫ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করেন। ওই ঘটনার পর ২০১২ সালের ১৯ মার্চ স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ৫ জনের সমন্বয়ে একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। মুল্যায়ন প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৬৩ লাখ ২০ হাজার টাকার কাজ করেছে। কিন্তু এক কোটি ৩৫ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করেছে। কাজ না করেই অতিরিক্ত ৭১লাখ টাকা আত্মসাতের বিষয়টি তদন্তে উঠে আসে।
কিন্তু স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর অতিরিক্ত টাকা নেওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। নির্দিষ্ট সময় কাজ শেষ না করায় ২০১৪ সালের ২৫ জুন নূরই এন্টারপ্রাইজের কার্যাদেশ শুধু বাতিল করে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মন্ত্রী সভায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। নানকের কারণে তার ভাইয়ের নির্মাণাধীন ভবনের কাজ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
দুদক সেই তদন্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরেই অনুসন্ধানে নামে। কার্যাদেশ নিয়ে কাজ ফেলে রেখে সরকারের একটি কোটি ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করেছে। তাছাড়া কাজের অতিরিক্ত ৭১ লাখ টাকা আত্মসাতের সত্যতা পান। এ ছাড়াও প্রকল্পের ভবনগুলোর ভিতসহ (ফাউন্ডেশন) কলামকে দুর্বল করে ভবনের স্থায়িত্ব কমিয়ে সরকারি সম্পদের ক্ষতিসাধনের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় দুদক এই মামলা দায়ের করেছে।
দুদকের উপ-পরিচালক মোঃ আমিনুল ইসলাম জানান, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে, নানকের ভাই নির্দিষ্ট সময় কাজ শেষ না করায় নূরই এন্টারপ্রাইজের দরপত্রের কার্যাদেশ বাতিলের পাশাপাশি নির্মাণাধীন ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে পরিত্যক্ত ওই ভবনের পাশেই নতুন করে ভবন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ২০২২ সালের ২৪ জুলাই ‘মেসার্স কোহিনূর এন্টারপ্রাইজ ’নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২৫ কোটি ১১ লাখ টাকার কার্যাদেশ পায়। কার্যাদেশ অনুযায়ী এক বছরের মধ্যে ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা ছিল।
কিন্তু ২০২৩ সালের ৩১ মে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সরেজমিনে দেখতে পান, মাত্র ১৬শতাংশ কাজ হয়েছে। ওই বছরের ১ জুন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কার্যাদেশ বাতিলের সুপারিশ করেন। এরপর মেসার্স কোহিনূর এন্টারপ্রাইজের কার্যাদেশ বাতিল করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ বাতিলের আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। মামলাটি আদালতে চলমান থাকায় নতুন ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান আইনি জটিলতায় আটকে আছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কোহিনূর এন্টার প্রাইজ মাত্র ১৬ শতাংশ কাজ করেছিল। কাজের ধীরগতি ও নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে না পারায় তাদের কার্যাদেশও বাতিল করা হয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কার্যাদেশ বাতিলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে। এ জন্য নতুন ভবনটির কাজের জন্য পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা যাচ্ছে না। মামলা নিষ্পত্তি হলে তারা পুনরায় দরপত্র আহ্বান করবেন।
আরএইচআর/এমআর
বাংলাদেশ সময়: ২০:৫৯:২৭ ● ১০১ বার পঠিত