বানারীপাড়ায় অবৈধ পশুর হাট, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

প্রথম পাতা » বরিশাল » বানারীপাড়ায় অবৈধ পশুর হাট, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার
শনিবার ● ১০ আগস্ট ২০১৯


বানারীপাড়ায় অবৈধ পশুর হাট

বানারীপাড়া (বরিশাল) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে বানারীপাড়ায় একাধিক অবৈধ পশুর হাট জমে উঠেছে। এক্ষেত্রে তারা সরকারী নিয়ম উপেক্ষা করে ও স্থানীয় প্রভাবে প্রভাব বিস্তার করে তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে রশিদ দিয়ে গরু প্রতি ৩% থেকে ৫% টাকা করে অবৈধ ভাবে খাজনা আদায় করছেন। প্রতি দিন এসব পশুর হাট থেকে অবৈধ ভাবে খাজনা আদায় করার কারণে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
অপরদিকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৫টি অবৈধ পশুর হাট বসার কারেণে এক মাত্র বৈধ পশুর হাটের পশু বিক্রি কমে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে বৈধ পশুর হাটের ইজারাদারা লোকসানী হওয়ার আসংকা করছেন। এক্ষেত্রে অবৈধ পশুর হাটের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পরেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরণের পদক্ষেপ নিতে পারেনি উপজেলা প্রশাসন। এক্ষেত্রে প্রশাসনের কর্মকর্তারা নিজেদের অনেকটা গুটিয়ে রেখেছেন বলে এলাকায় অভিযোগ ওঠেছে।
এ বিষয়ে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বানারীপাড়ার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৫টি অবৈধ পশুর হাট বসার কারেণে এক মাত্র বৈধ পশুর হাট সীমআন্তবর্তী এলাকার সলিয়াবাকপুর-গুয়াচিত্রা পশুর হাটের পশু বিক্রি কমে গেছে। শুক্রবার ওই হাটের ইজারাদার মিলন মৃধা এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, বানারীপাড়ার সলিয়াবাকপুর ও ঝলকাঠী উপজেলার গুয়াচিত্রা পশুর হাটে দু’ উপজেলা থেকে পৃথক ভাবে ইজারা নিয়ে দুই জেলার সীমান্তবর্তী গুয়াচিত্রা গরুর হাট নামে পরিচিত একটি পশুর হাট বসিয়েছেন। এখানে স্থানীয় পশুর পাশাপাশি বেপারীরা দেশের সিমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রলার ও ট্রাকযোগে অসংখ্য গরু নিয়ে আসছেন। তাদের হাটে আসা শত শত গরু বিক্রি করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন। এর কারণ হিসেবি ইজারাদার মিলন মৃধা বলেন, বানারীপাড়াসহ পাশর্^বর্তী উপজেলায় একাধিক অবৈধ পশুর হাট বসার কারণে তাদের হাটে পশু বিক্রি অনেকটা কম বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। মিলন বলেন, এখানে প্রশাসনের কর্মকর্তারা অবৈধ পশুর হাটের বিরুদ্ধে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে তাদের হাটে ক্রেতা কম আসায় পশু বিক্রি কমে গেছে। ফলে তারা লোকসানের শিকার হচ্ছেন। ইজারাদার মিলন মৃধা বলেন, সরকারী নিয়ম অনুযায়ী খাজনা আদায়ের ক্ষেত্রে তাদেরকে ক্রেতাদের কাছ থেকে গরু বিক্রির মূল টাকার শতকরা ৫% টাকা হারে খাজনা আদায় করার নিয়ম থাকলেও তারা সে টাকা না নিয়ে ১% এরও কম হিসেবে গরু প্রতি মাত্র ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা করে খাজনা আদায় করছেন। এক্ষেত্রে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সার্বিক নিরাপত্যা দেয়ার পাশাপশি জাল টাকা সনাক্ত করার জন্য মেশিন দিয়ে পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করছেন বলেও তিনি জানান। ইজারাদার মিলন মৃধা বানারীপাড়া সহ পাশর্^বর্তী উপজেলার অবৈধ পশুর হাটের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে দাবী জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে সৈয়দকাঠী ইউনিয়নের ব্যবসায়ী আব্দুল মন্নান সহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এক সময় উজিরপুর উপজেলার হারতা বাজারে সপ্তাহে দু’দিন পশুর হাট বসত। প্রায় একযুগধরে ওই হাটের বেপারীরা স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বানারীপাড়া উপজেলার সৈয়দকাঠী ইউনিয়নের বাওয়ালিয়া গ্রামে এম. আলী টেকনিক্যাল কলেজ সংলগ্ন মাঠে একটি বড় ধরনের পুশুর হাট বসায়। সরকারী ইজারা ছাড়াই প্রায় একযুগ ধরে গরুর বেপারীরা ওই হাটে সপ্তাহে দু’দিন (রবিবার ও বুধবার নির্ধারিত হাটের দিন) ছাড়াও প্রতি বছর ঈদ ও কুরবানীর ঈদের সময় তারা নিয়মিত পশু বিক্রি করে আসছেন। এ ক্ষেত্রে তারা স্থানীয় এক প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় বাওয়ালিয়া গরুর হাট নামের পশুর হাটের ছাপানো রশিদ দিয়ে ক্রেতাদের কাছ থেকে শতকরা ৩% থেকে ৫% হারে খাজনা আদায় করছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদ বলেন, বাওয়ালিয়া সহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পশুর হাট বসার খবর তার জানা নেই। তবে অবৈধ পশুর হাট’র বিরুদ্ধে তিনি তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানান।
এদিকে একই ভাবে কুরবানির ঈদ উপলক্ষে প্রভাবশালীরা গত এক সপ্তাহ ধরে সৈয়দকাঠী ইউনিয়নের আউয়ার বাজার, বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদ সড়ক, ্ইলুহার ইউনিয়নের ওয়াজেদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ ও বানারীপাড়া লঞ্চ ঘাট সংলগ্ন পশুর হাট বসিয়েছেন। এসব পশুর হাটের মধ্যে সব চেয়ে কম রেটে খাজনা আদায় করছেন বানারীপাড়া পৌর শহরের লঞ্চঘাট সংলগ্ন পশুর হাটের আয়োজকরা। ওই হাটের আয়োজক কমিটির প্রতিনিধি মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, তারা ক্রেতাদের সুবিধার্থে পৌর শহরের ১নং ওয়ার্ডের কেন্দ্রীয় ঈদগা মাঠের পাশে একটি পশুর হাট বসিয়েছেন। এখান থেকে তারা এতিম খানার সাহায্যর হিসেবে ক্রেতাদের কাছ থেকে গরু প্রতি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা করে রাখছেন বলে তিনি জানান।
অপরদিকে এ উপজেলার একাধিক অবৈধ পশুর হাটের কারণে এক মাত্র বৈধ পশুর হাটটি বরিশাল বিভাগের সুপরিচিত হওয়ার পরেও সলিয়াবাকপুর-গুয়াচিত্রা পশুর হাটের বেচা-বিক্রি পূর্বের চেয়ে অনেকটা কমে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন সেখানকার ইজারাদার মো. মিলন মৃধা। তিনি অবৈধ পশুর হাট’র বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লীষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানিয়েছেন।
এদিকে সলিয়াবাকপুর-গুয়াচিত্রা পশুর হাটের বেপারী মোশারেফ হোসেন জানান, দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা কুষ্টিয়া, আলমডাংগা, সাতক্ষিরা, যশোহর, ঝিনাইদা, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও সিরাজগঞ্জ এলাকা থেকে ট্রলারে ৫০-৬০টি ও ১টি ট্রাকে ২০-২৪টি গরু আনাতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে তাদের ট্রলার ও ট্রাক ভাড়ার সাথে নদীতে টোল’র পাশাপাশি শ্রমিক সংগঠনের নামে ৩-৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে। এসব খরচের কারণে তাদেরকে গরু প্রতি ৫% দাম বেশিতে বিক্রি করতে হচ্ছে।  মোশারেফ আরও জানান, শুক্রবার সে গুয়াচিত্রা পশুর হাটে সর্বচ্চ ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা দামে ১টি গরু বিক্রি করছেন। এছারাও সে ওই হাটে ৮০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ২০ হইতে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দামে ১৭টি গরু বিক্রি করেছেন বলে কালাম জানান।

জিএমআর

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩৮:০১ ● ৪৮২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ