পটুয়াখালী-৩ আসনে আ’লীগ বিএনপিতে প্রার্থীর ছড়াছড়ি

প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » পটুয়াখালী-৩ আসনে আ’লীগ বিএনপিতে প্রার্থীর ছড়াছড়ি
বৃহস্পতিবার ● ৯ নভেম্বর ২০২৩


পটুয়াখালী-৩ আসনে আ’লীগ বিএনপিতে প্রার্থীর ছড়াছড়ি

গলাচিপা (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

পটুয়াখালীর গলাচিপায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে গলাচিপা-দশমিনা আসনটি নিজের দখলে নিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর ছড়াছড়ি। পটুয়াখালী-৩ সংসদীয় আসনটি জেলার দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলা নিয়ে গঠিত। জাতীয় সংসদের ১১৩ তম আসন এটি।
ভোটের রাজনীতিতে আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের একচেটিয়া দুর্গ হিসেবে পরিচিত। ১৯৯১ সাল থেকে আসনটিতে সর্বাধিক চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা প্রয়াত আখম জাহাঙ্গীর হোসাইন। ১৯৯৬-২০০১ আওয়ামী লীগ সরকারের বস্ত্র প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন তিনি।দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বেশ কয়েকজন নেতা তৃণমূল পর্যায়ে গণসংযোগসহ বিভিন্ন ভাবে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে বর্তমানে সংসদ সদস্য থাকার সুবাদে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন এসএম শাহজাদা (এমপি)। প্রায় প্রতি মাসেই তিনি কোনো না কোনো উপলক্ষে গলাচিপা ও দশমিনা উপজেলার মাঠ পর্যায়ে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের চারবারের সংসদ সদস্য ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী থাকার সুবাদে দলটির কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা আখম জাহাঙ্গীর হোসাইনের এ আসনের প্রতিটি ওয়ার্ড পর্যায়ে শক্তিশালী কর্মী সমর্থক রয়েছে। প্রয়াত এই নেতার সুদীর্ঘ বছরের সঞ্চিত ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার পাশাপাশি দলীয় সমর্থন কাজে লাগাতে মাঠে নেমেছেন তার ছেলে গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আসম জাওয়াদ সুজন।
অপরদিকে ব্যক্তিগত দান অনুদান, বেকার যুবকদের বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান ও বিভিন্ন দুঃসময়ে মানুষের পাশে থেকে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে গত কয়েক বছরে মাঠ পর্যায়ে যথেষ্ট সাড়া ফেলেছেন গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এ্যাডভোকেট মো. ফখরুল ইসলাম মুকুল। তার বাবা গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য এ্যাড. মো. আক্তারুজ্জামান প্রায় আড়াই যুগ উপজেলার ডাকুয়া ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি ছিলেন এবং মাতা রেনু বেগম একই উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক পদে প্রায় ২০ বছর দায়িত্ব পালন করেন। এ বিষয়ে তিনি সাগরকন্যাকে বলেন, ‘আমি আশাবাদী দলীয় সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার মনোনয়নের বিষয়টি বিবেচনা করবেন।’এদিকে মাঠে নেমেছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও বিজিবি মহাপরিচালক লে. জে. (অব.) মো. আবুল হোসেন আজাদ। অবসরের পর থেকেই এই আসনের তৃণমূল পর্যায়ে গণসংযোগ ও সরকারের নানামুখী উন্নয়নের প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক নেতা কামরান সাইদ প্রিন্স মহব্বতও বহু বছর ধরে এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এলাকার অসহায় মানুষদের দান অনুদান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে তার। হাল ছাড়ছেন না গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগের দুইবার নির্বাচিত সভাপতি অধ্যাপক সন্তোষ কুমার দে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করে রেখেছেন দীর্ঘদিন ধরে। তাই মনোনয়ের প্রত্যাশা আছে তারও। এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুর্দিনেউপজেলা আওয়ামী লীগের হাল ধরে আজও দলকে সুসংগঠিত করে রেখেছি। ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় নেতাকর্মীদের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রেখেছি আজও রাখছি। নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি যাচাই বাছাই করে মনোনয়ন দেন তবে আমাকে দিবেন। পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক, সাবেক ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও কৃষকলীগ নেতা মো. তসলিম সিকদার এই আসনটিতে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে, দশমিনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আজীজ বলেন, ‘ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান থেকে আওয়ামী লীগ করি। ১৯৮৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত একাধারে দলটির দশমিনা উপজেলা কমিটির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সবকটি সম্মেলনে একই কমিটির নির্বাচিত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। ১৯৮৬ সাল থেকে প্রতিবারই দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছি। কিন্তু একবারও পাইনি। আদু ভাইয়ের মতো সকলটাতেই ব্যর্থ হয়েছি। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমার নেত্রী শেখ হাসিনার কাছে মনোনয়ন চাইবো। আশা করি তিনি আমাকে বিবেচনায় নেবেন।’এদিকে, কর্মীবান্ধব নেতাখ্যাত দশমিনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট ইকবাল মাহমুদ লিটন আসনটির দুই উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ের দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করাসহ সরকারের উন্নয়নের প্রচার প্রচারণা ও গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। দশমিনা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সদস্য এ্যাড. শাখাওয়াত হোসেন শওকতও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।অন্যদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আ’লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা গণসংযোগে যথেষ্ট ব্যস্ত সময় পার করলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আন্দোলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যস্ত রয়েছেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।১৯৯১ এর নির্বাচনে এ আসনে আ’লীগের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্ধিতা করেছেন বিএনপির তৎকালীন স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবদুল বাতেন। সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর মৃত্যুর পর ১৯৯১ সালে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনীত প্রার্থী আলহাজ্ব মো. শাহজাহান খান পরবর্তীতে বিএনপিতে যোগদান করে ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সবগুলো নির্বাচনে আসনটি থেকে আ’লীগের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্ধিতাকরেছেন। সম্প্রতি তিনি প্রয়াত হয়েছেন।বর্তমানে তারই ছেলে জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. শিপলু খান বাবার ত্যাগ ও স্বপ্ন ধরে রাখতে এ আসনের লড়াই করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন এবং তিনি বলেন, আমার বাবা গলাচিপা-দশমিনা বিএনপি থেকে কয়েকবার নির্বাচন করেছেন। তার মৃত্যুতে তার স্বপ্নকে বাস্তবায়নে এবং ত্যাগের কথা বিবেচনা করে কেন্দ্র থেকে আমাকে মনোনয়ন দিবে বলে আমার বিশ^াস। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কোনো প্রার্থী আত্মপ্রকাশ না করলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. হাসান আল মামুন।দলটির কেন্দ্র ঘোষিত সকল আন্দোলন কর্মসূচিতে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করা এই নেতা আসনটির দুই উপজেলার বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোতেও সর্বাধিক পছন্দের কেন্দ্রে রয়েছেন। নিয়মিত এলাকায় গণসংযোগ করেন তিনি। সাধারণ মানুষের মাঝে রয়েছে তার জনপ্রিয়তা। ক্লিন ইমেজের এই নেতার বিকল্প আসনটির বিএনপির রাজনীতিতে নেই এমনটাই জানান উপজেলা দুটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। এ আসনের বিএনপির রাজনীতিতে হেভিওয়েট ও যোগ্য প্রার্থী হিসেবে হাসান আল মামুন দলের ভেতরে ও বাইরে সমান ভাবে জনপ্রিয়। তাই বিএনপি যদি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে হাসান আল মামুন প্রার্থী হবেন এমনটাই দাবি করছেন দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলা বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা।এদিকে, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ গোলাম মাওলা রনি দল ও দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একাধিক মন্তব্য করে দলের বিরাগভাজন হন। ফলে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে পর পর দুইবার দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিএনপিতে যোগদান করেই ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়নপ্রাপ্ত হন তিনি। কিন্তু নির্বাচনটিতে তিনি কোনো প্রতিদ্বন্ধিতাই গড়ে তুলতে পারেননি। এরপর থেকেই এ নির্বাচনী এলাকাটিতে তার যাতায়াত প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে আসনটিতে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা একাধিক হামলা মামলার শিকার হলেও তাদের কোনো খোঁজখবরই রাখেননি গোলাম মাওলা রনি। দলের কিছু নেতা তাকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ভাবছে।তবে সাধারণ জনগণ ও বিশ্লেষকদের মতে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে হাসান মামুনই পারবেন বিগত নির্বাচনগুলোতে ভোটের হিসাব নিকাশ পাল্টে আওয়ামী লীগের এ দূর্গে আঘাত হানতে।এদিকে, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরুল হক নূরুও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মানুষের ধারণায় থাকলেও আসনটিতে তার উল্লেখযোগ্য কর্মী সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ী নেই বললেই চলে। একাধিক সূত্রে জানা যায়, আসনটির একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাড়ি থাকায় এবং সাধারণ জনগণের সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ না থাকার কারণে এ আসনে আ’লীগ ও বিএনপির ভোটের রাজনীতিতে কোনো প্রভাবই ফেলতে পারবেন না এই নেতা। অন্যদিকে, ভোটের রাজনীতিতে এ আসনে জাতীয় পার্টির তেমন প্রভাব না থাকলেও এগিয়েছে চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটি একক ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে দশমিনা উপজেলা সভাপতি মজিবুর রহমান আজবাহার মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান তিনি।

এসডি/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩৯:০১ ● ১৬০ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ