বামনায় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে লাঞ্চিত করার অভিযোগ!

প্রথম পাতা » বরগুনা » বামনায় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে লাঞ্চিত করার অভিযোগ!
বৃহস্পতিবার ● ২৮ এপ্রিল ২০২২


বামনায় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে লাঞ্চিত করার অভিযোগ!

বামনা(বরগুনা)সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

 

 

 

ভোট না দেওয়ায় পিটিয়ে যখম, জমি দখল, কথা না শুনলে মারধর, স্বাধীনতা দিবসে অশ্লিল নৃত্যের আয়োজনসহ নানাবিধ অভিযোগ উঠেছে বরগুনার বামনা উপজেলার ৩নং রামনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জমাদ্দারের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে প্রকাশ্যে চর-থাপ্পরসহ লাঞ্চিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। চেয়ারম্যান কর্তৃক লাঞ্চিত হওয়া ওই উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার নাম মো. শাহ আলম। তিনি রামনা ইউনিয়নের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার(২৭ এপ্রিল) রাত ৮টায় উপজেলার হাসপাতাল রোডে অবস্থিত সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের সামনে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী  চা পান বিক্রেতা আ. রহমান জানায়, চেয়ারম্যানের হামলার শিকার ওই কর্মকর্তা তার দোকের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো। এমন সময় চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জমাদ্দার দলবল নিয়ে তাকে ঘিরে ফেলে। চেয়ারম্যানকে বলতে শোনাগেছে তুই মোর দেওয়া নাম কেন তালিকায় রাখোনি এই বলে সে এলোপাথারী চড়- থাপ্পর শুরু করে। একপর্যায়ে ওই চা বিক্রেতামহ আরো কয়েকজন মিলে ওই উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে তার দোকে ঢুকিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে তাকে রক্ষা করেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানাগেছে, বামনা উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে প্রান্তিক চাষীদের প্রনোদনা দিতে প্রতিটি ইউনিয়নে ৫শত জন চাষীদের তালিকা তৈরী করেন কৃষি বিভাগ। রামনা ইউনিয়নের তালিকা প্রনয়ন করে উপকারভোগীদের মালামাল প্রাপ্তির স্লিপ প্রদান করা হয়।

খোজ নিয়ে জানাগেছে, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ওই তালিকা প্রণয়ন করা বিধান থাকলেও রামনা ইউনিয়নের দ্বায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা মো. শাহ আলম চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জমাদ্দারকে নিয়ে সমন্বয় করে তালিকা প্রনয়ন করেন। ওই তালিকায় চেয়ারম্যান নিজের পছন্দের ৪শত ৪৫জন চাষীদের নাম অন্তর্ভূক্ত করেন। বাকি ১৫জন চাষীর নাম তিনি পরে দেওয়ার কথা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জানান। বিগত ২১ এপ্রিল ওই প্রনোদনার উপকারভোগী চাষীদের তালিকা কৃষি দপ্তরে জমাদেওয়ার শেষ দিন ছিলো। চেয়ারম্যান নজরুর ইসলাম বাকি ১৫ জন চাষীদের তালিকা না জমাদেওয়ায় উপজেলা কৃষি দপ্তর সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার সমন্বয়ে বাকিদের নাম অন্তর্ভূক্ত করে পূর্নাঙ্গ তালিকা  তৈরী করেন। ওই ইউনিয়নে কৃষি প্রনোদনা দিতে সকল চাষিদের মাঝে মালামাল প্রাপ্তির স্লিপ প্রদান করেন কৃষি দপ্তর । এই খবর পেয়ে ক্ষিপ্ত হয় চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জমাদ্দার। তিনি তার দলবল নিয়ে গত বুধবার রাতে বামনা সদরের হাসপাতাল রোডে রেজিষ্ট্রি অফিসের সামনে প্রকাশ্যে ওই ইউনিয়নের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহ-আলমকে মারধর করেন।

এদিকে চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জমাদ্দারের বিরুদ্ধে নির্বাচনে সমর্থন না করায় ও ভোট না দেওয়ায় পিটিয়ে জখম, বিভিন্ন জনের জমি দখলসহ নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে ।

চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জমাদ্দার রামনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরে গত বছর ২৭ জুলাই রামনা বাজারে প্রকাশ্যে অসীম চন্দ্র শীল নামে একজনকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছিলেন। এসময় আ. মালেক নামে এক ইউপি সদস্যকেও তিনি লাঞ্চিত করেন। এঘটনায় তখন মামলা করেন ওই ভুক্তভোগী। পরে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সহায়তায় ওই ঘটনাটি নিষ্পত্তি করা হয়। ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম প্রথমবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরে আনন্দ সিকদার নামে একজনকে উপজেলা পরিষদের ভিতরে একটি শালিস বৈঠকে প্রকাশ্যে মারধর করেছিলেন। এ ঘটনায়ও তৎকালীন সময়ে মামলা করেছিলেন ওই ভূক্তভোগী। এছারাও গত নির্বাচনের পূর্বে তিনি তাঁর বাড়ীর পার্শ্ববর্তী পারুল বেগম নামে অসহায় এক নারীর জমি দখলের চেষ্টা করেন। ওই নারী দখলে বাঁধা দিলে তিনি ও তাঁর সহযোগী রাজু জমাদ্দার ওই নারী ও তাঁর মাকে পিটিয়ে জখম করেন। পরে তারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হলে সেখানে গিয়ে তাদের হুমকী-ধামকী প্রদান করে। চেয়ারম্যানের ভয়ে তখন তারা মামলা করতে পারেন নি বলে জানায় ওই নারী।

শুধু তাই নয় এই ইউপি চেয়ারম্যান বিগত স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর রাতে তার এলাকায় অশ্লীল নৃত্যের যাত্রাপালার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। গনমাধ্যম সংবাদটি প্রকাশ করলে তিনি সাংবাদিকদের নানা রকম হুমকী প্রদান করেন।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে লাঞ্চিত করার বিষয়ে জানতে একাধিকবার চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জমাদ্দারকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

বামনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্তী এদবর জানায়, আমাদের পরিপত্রে রয়েছে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা প্রনোদনার উপকারভোগীদের তালিকা প্রনয়ন করবেন। আমার ওই কর্মকর্তা তবুও চেয়ারম্যানের সহায়তা নিয়েছিলো। চেয়ারম্যানের দেওয়া ৪শত ৪৫ নামই তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। মাত্র ১৫ নাম কেন তিনি দিতে পারেননি এজন্য আমার ওই ইউপির দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রকাশ্যে লাঞ্চিত করেছেন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জমাদ্দার। আমরা এ ঘটনা উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তাদের পরামর্শ নিয়ে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিবেক সরকার বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি। উভয় পক্ষের সাথে কথা বলে আমরা এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

 

 

 

 

 

এইচআর/এমআর

 

বাংলাদেশ সময়: ২০:৩৫:২৫ ● ২৭৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ