কলাপাড়ায় চা-দোকানী রাহেলার টিকে থাকা!

প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » কলাপাড়ায় চা-দোকানী রাহেলার টিকে থাকা!
মঙ্গলবার ● ৮ মার্চ ২০২২


কলাপাড়ায় চা-দোকানী রাহেলার টিকে থাকা!

মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্য অফিস॥

২২টি বছর ঢাকায় ৬-৭ টি বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করেছেন। তিন বেলা খাবার জোটাতে এসব করেছেন। উপোস ছিল নিত্যদিনের। জমি-জিরেত নেই। স্বামীর জমি-জমা তো দুরের কথা উল্টো ঢাকায় দুর্ঘটনার শিকার হয়ে এখন অসুস্থ, কোন কাজ করতে পারছেন না। কলাপাড়ার তুলাতলী গ্রামে মায়ের ভিটিতে থাকছেন। রাস্তার পাশে পিঠা বিক্রি করেছেন। জীবন-যুদ্ধের ধকল ঠেলতে ঠেলতে বয়স এখন পঞ্চাশ পেরিয়েছে। এমন একজন রাহেলা বেগম। এখন পাঁচটি বছর ধরে চা বিক্রি থেকে শুরু করে স্টেশনারি দোকান দিয়েছেন। দোকান শুরুর সময় এনজিও ওয়ার্ল্ড কনসার্ণ ৬-৭ হাজার টাকার মালামাল কিনে দিয়েছেন। দুই ছেলে, দুই মেয়ের ছোট ছেলে আরিফসহ বড় মেয়ের এক নাতিকে নিয়ে চারজনের সংসারে এখন অনাবিল সুখ না থাকলে চারটে ডাল-ভাতের ব্যবস্থা নিজেই করতে পারছেন। দৈনিক এক-দেড় হাজার টাকা বিক্রি করছেন। গড়ে দেড়-দুশ’ টাকা আয় করছেন। উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড কনসার্ণ বাংলাদেশ এর কলাপাড়ার সহায়তায় ১৭ জনে মিলে আত্মসহায়ক দল করেছেন। নাম গোলাপ মহিলা দল। সেখানে সপ্তাহে প্রত্যেকে ৫০ টাকা করে সঞ্চয় জমা করছেন। এখন ৮৬ হাজার টাকা জমা হয়েছে। স্বাবলম্বী হতে কিংবা কোন সদস্যের প্রয়োজন হলে নিজেরাই সভা ডেকে মাত্র পাঁচ পার্সেন্ট সার্ভিস চার্জে লোন নিচ্ছেন। মাসিক কিস্তি মাত্র এক হাজার টাকা। এই সমিতির লোনী রয়েছেন সাতজন। কেউ খেলাপী নয়।  ফি মাসে একবার সভা করেন। প্রত্যেকে প্রত্যেকর খোঁজ-খবর রাখেন। বাল্য বিয়ে রোধ, নিজেদের পারিবারিক সমস্যা এবং উপার্জনমূখি চিন্তা-চেতনার কথা আলোচনা করেন। সমিতির সভাপতি কুলসুম জানালেন, করোনাকালে আমরা জমানো টাকা থেকে টাকা তুলতে না পারলে না খেয়ে থাকতে হতো। জানালেন রাহেলা এখন রাত ১১ টা পর্যন্ত দোকান করেন। কারেন্ট পৌছানোর পরে কাস্টমার বেড়েছে। বেড়েছে আয়। সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির একটি কার্ড রয়েছে। ১০ টাকা কেজি দরে বছরের পাঁচ মাস ৩০ কেজি করে চাল পাচ্ছেন। একটি এনজিও সংস্থা থেকে কিছু টাকা লোন নিয়েছেন। আত্মসহায়ক দল গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে নিজেদেরকে আর্থিকভাবে অনেকটা স্বচ্ছল মনে করছেন এই নারী দোকানি। সংস্থাটি থেকে জানা গেল কলাপাড়ার ছয়টি ইউনিয়নে এমন ৭৬টি দল রয়েছে। যার সদস্য সংখ্য প্রায় ১২৫০ জন। যাদের সঞ্চয় রয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। এসব নারীরা যেন নিজেদের স্বাবলম্বী করতে নিজেরাই পথ খুঁেজ পেয়েছেন। শুধু এভাবে বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তাসহ নারী প্রধান পরিবারের সদস্যরা আত্মসহায়ক দলের মাধ্যমে নিজেদের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করছেন। শুধু বেসরকারি নয় সরকারি উদ্যোগেও কলাপাড়ায় ৩৬৮৯টি দুঃস্থ নারী প্রধান পরিবার ফি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাচ্ছেন। মহিলা অধিদফতর এসব মনিটরিং করছেন। দুগ্ধপোষ্য শিশুর মা ৮৫০ জন গর্ভকালীন সময় থেকে তিন বছর পর্যন্ত মাসে আট শ’ টাকা করে পাচ্ছেন। বিধবা ভাতা পাচ্ছেন ৬৪৪৩ জন নারী। ফি মাসে পাঁচ শ’ টাকা। প্রতিবন্ধী নারী রয়েছে সহস্রাধিক, যারা মাসে ৭৫০ টাকা করে পাচ্ছেন। এছাড়া অনগ্রসর দলিত হরিজন নারীরাও পাচ্ছেন ভাতা। আর ঋণের ব্যবস্থাতো আছেই। যেন নারী সমাজকে এগিয়ে নেয়ার কর্মসূচিতে কলাপাড়ায় সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে দুঃস্থ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৬৫ ভাগ নারী কোন না কোন সহায়তার আওতায় রয়েছেন। তবে এসব নারীরা জানেন না আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। দিবস জানা কিংবা পালন করা এদের কাছে মুখ্য বিষয় নয়। কর্মসংস্থান, নিজেকে কর্মক্ষম করে তোলা, জীবন-সংসারে একটু আর্থিক স্বচ্ছলতার হাতছানি যেন পৌছে এমনটিই প্রত্যাশা এসব লড়াকু নারীদের। চাওয়া-পাওয়া তাই। তবে এসব নারীরা এখন লড়ছেন কোমর সোজা করে। দাড়াচ্ছেন শক্ত করে মাটি আকড়ে ধরে।

এমইউএম/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২২:১৮:২৮ ● ১৯৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ