আমতলীর বিতর্কিত অধ্যক্ষের হাইকোর্টের আদেশ বাতিল

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলীর বিতর্কিত অধ্যক্ষের হাইকোর্টের আদেশ বাতিল
সোমবার ● ৩ জানুয়ারী ২০২২


আমতলীর বিতর্কিত অধ্যক্ষের হাইকোর্টের আদেশ বাতিল

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

আমতলী বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রী কলেজের জাল সনদধারী সেই বিতর্কিত অধ্যক্ষ মোঃ ফোরকান মিয়ার হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের পুর্নাঙ্গ বেঞ্চ। সোমবার (৩ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মোঃ নুরুজ্জামান ও ওবায়দুল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ শুনানী শেষে এ আদেশ দেন। একই সাথে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতনভাতা এবং এডহক কমিটির কার্যক্রম বিধি মোতাবেক পরিচালনার নির্দেশ দিয়ে মামলাটি নিষ্পত্তি করে দেন।
জানাগেছে, ফোরকান মিয়া ১৯৯৯সালে বিএ (পাস) জাল সনদ দিয়ে আমতলী বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজে ইসলামী শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক পদে চাকুরি নেন। ২০১০ সালে তিনি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ওই কলেজের অধ্যক্ষ পদে আসীন হন। অধ্যক্ষ পদে আসীন হওয়ার তিন বছরের মাথায় ২০১৩ সালে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, নারী কেলেংকারীর অভিযোগে কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটি তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। সাময়িক বরখাস্তের পর তাঁর ডিগ্রি পাসের জাল সনদের তথ্য বেরিয়ে আসে। জাল সনদের তথ্য বেড়িয়ে আসার  পর ফোরকান মিয়া স্বেচ্ছায় কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তাঁর বিএ পাসের জাল সনদের বিষয়ে ২০১৩ সালে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন কলেজর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ মজিবুর রহমান। আদালতে ফোরকান মিয়া তাঁর আমতলী কলেজের ডিগ্রি পাসের সনদ অস্বীকার করে প্রিমিয়াম ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রি পাসের সনদ আদালতে দাখিল করেন। ওই সনদটি জাল বলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন প্রত্যায়ন দেন। বিগত ৮ বছর ফোরকান কলেজে দায়িত্ব থেকে দুরে ছিলেন। গত ১২ জুলাই  মোঃ ফোরকান মিয়া রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মজিবুর রহমানের স্বাক্ষর জাল করে ফরোয়াডিং দিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোসা. মাকসুদা আক্তার নামে একজনকে কলেজের অন্তবর্তীকালীন কমিটির আবেদন করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মাকসুদা আক্তারকে অন্তবর্তীকালীন সভাপতি করে কলেজের এডহক কমিটি গঠন করে দেয়। ওই এডহক কমিটির সভাপতি ফোরকানকে অবৈধভাবে অধ্যক্ষ পদে পুর্নবহাল করেন। এদিকে এডহক কমিটির সভাপতি মোসাঃ মাকসুদা আক্তারের বিএ পাশের সনদটি জাল বলে তথ্য বেড়িয়ে আসে। সভাপতির বিএ পাশের জাল সনদের সত্যতা প্রমানিত হওয়ায় গত বছর ১২ সেপ্টেম্বর বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকুকে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এডহক কমিটির সভাপতি নিযুক্ত করেন। গত বছর ২৬ নভেম্বর ফোরকান মিয়ার বিএ পাসের সনদ জাল বলে সত্যতা প্রমানিত হওয়ায় এডহক কমিটি তাকে ফের বরখাস্ত করেন। বরখাস্তের পরের দিন গত বছর ২৯ নভেম্বর ফোরকান মিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং তার স্বাক্ষরে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতনভাতা চেয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। হাইকোর্টের বিচারক ইউএন এবং তার স্বাক্ষরে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতনভাতা প্রদানের নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে এডহক কমিটির সভাপতি সুপ্রিম কোর্টে পুর্নাঙ্গ বেঞ্চে আপিল করেন। সোমবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মোঃ নুরুজ্জামান ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ শুনানী শেষে  হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করেন এবং একই সাথে শিক্ষক- কর্মচারীদের বেতনভাতা ও এডহক কমিটির কার্যক্রম বিধি মোতাবেক পরিচালনার নির্দেশ দিয়ে মামলাটি নিষ্পত্তি করে দেন।
বিতর্কিত ও জাল সনদধারী অধ্যক্ষ মোঃ ফোরকান মিয়া বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আদেশের বিষয়ে আমি  জেনেছি।
কলেজ এডহক কমিটির সভাপতি গোলাম সরোয়ার টুকু বলেন, আমি ন্যায় বিচার পেয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মোতাবেক সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবি এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করে এডহক কমিটির কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালনার নির্দেশ দিয়ে মামলাটি নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২০:০০:৫৪ ● ৮৮৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ