ঘূর্ণিঝর বুলবুল বিপাকে পরীক্ষার্থীরা, এখনও পৌঁছেনি ত্রাণ সহায়তা

প্রথম পাতা » ঝালকাঠী » ঘূর্ণিঝর বুলবুল বিপাকে পরীক্ষার্থীরা, এখনও পৌঁছেনি ত্রাণ সহায়তা
রবিবার ● ১৭ নভেম্বর ২০১৯


---

ঝালকাঠি সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
ঝালকাঠির রাজাপুরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ৬ ইউনিয়নে সরকারি হিসেব মতে ৫শ’৩ টি ঘর ক্ষতিগ্রস্থ ও বিধ্বস্ত হয়েছে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে আঘাতের ৮দিন অতিবাহিত হলেও গৃহহীন পরিবারগুলো এখনও কোন ত্রাণ সহায়তা বা ঘর নির্মাণে সহায়তা পায়নি। এদিকে বসতঘর ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের লোকজন গৃহহারা হয়ে বিভিন্ন স্বজনের বাড়িসহ খোলা আকাশের নিচে অনেকে আবার ক্ষতিগ্রস্থ ঘরের মধ্যেই কোনমতে আশ্রয় নিয়ে রাত্রীযাপন করছেন। তবে চলমান পাবলিক পরীক্ষার্থীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। ভাঙা ঘর ও অধিকাংশ ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় সঠিকভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতিও নিতে পারছে না তারা।
রাজাপুরের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মামুনুর রশিদ জানায়, ঝড়ে ৫শ ৩ টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ইতোমধ্যে ২ শতাধিক লোক আবেদন করেছেন এবং এখনও ক্ষতিগ্রস্থদের পক্ষ থেকে আবেদন সংগ্রহ করা হচ্ছে। আবেদন যাচাই বাছাই করে সহায়তা দেয়া হবে। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাজাপুর সদর ইউনিয়নের বড় কৈবর্তখালী গ্রামের কৃষক আঃ মন্নান (৫০)। তিনি কৃষি কাজের পাশাপাশি টমটম চালিয়ে ৫ সদস্যের সংসার চালান। কিন্তু ঝড়ের আঘাত গাছ পড়ে তাদের সেই ছোট ঘরটি বিধ্বস্ত হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ৩ সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে শুক্কুর রাজাপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। অপর দুই সন্তান শিশু। কৃষক আঃ মন্নান বলেন, আমি এখন মানুষের ঘরে রাত্রি যাপন করি সস্তানদের নিয়ে। এখন দিশেহারা কি করব বুঝতে পারছি না। রাজাপুরে শুক্তাগড় গ্রামের অসহায় দিনমজুর সাইদুল ফকিরের বসতঘর লন্ডভন্ড ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে। ছোটবেলা বাবাকে হারিয়ে পরিবার পরিচালনার দায়িত্ব পড়ে দিনমজুর সাইদুল ফকিরের উপর। প্রতিদিন পরিশ্রমের অর্থ দিয়ে ভালো ই যাচ্ছিল তাদের পরিবারের দিন। তবে হঠাৎ ঘূর্ণিঝড় বুলবুল সব কিছু এলোমেলো করে দেয়। রাজাপুরের বড় কৈবর্তখালী গ্রামের মৃত মঈনউদ্দীনের স্ত্রী আমরুন বেগম (৭০)। স্বামী মারা যাওয়ার নিজেই ভিক্ষা করে কোনমতে সংসার চালায়। সন্তানরাও গরীব হওয়ায় তার খবর দিতে পারেন না। ঝড়ে গাছ পড়ে মাটির সাথে মিশে গেছে তার শেষ আশ্রয় স্থল স্বামীর রেখে যাওয়া স্মৃতি চিহ্ন বসতঘরটি। বৃদ্ধ আমিরুন বেগম বলেন, বয়স্ক ভাতা ও মানুষের সাহায্যে কোনমতে জীবন যাপন করে আসছিলাম। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় বুলবুল একমাত্র মাথা গোঁজার ঠাঁই বসত ঘরটি মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। এখন সরকার সহায়তা না করলে খোলা আকাশের নিচেই জীবনযাপন করতে হবে। গৃহহীন এ ভিক্ষুক মাথার গোঁজার ঠাই চান। বড় কৈবর্তখালী গ্রামের বর্গা চাষী সোবহান হাওলাদারের ঘরের উপর গাছ পড়ে ঘর ভেঙে চৌচির হয়ে গেছে। তার ৬জন সন্তাদের নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বড় কৈবর্তখালীর গ্রামের আঃ শুক্কুর মৃধার  (৫২) ঘরেও গাছ পড়ে ঘর ভেঙে গেছে। এছাড়া কৈবর্তখালীর গ্রামের আঃ রাজ্জাক সিকদারের ঘরের চালা উরিয়ে নিয়াসহ উপজেলার ৬ ইউনিয়নে অন্তত ৫ শতাধিক দরিদ্র, অসহায় পরিবারের বসতঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। জানতে চাইলে রাজাপুরের ইউএনও সোহাগ হাওলাদার জানান, ইতোমধ্যে বসতঘর বিধ্বস্ত-ক্ষতিগ্রস্থ ২ শতাধিক পরিবারের পক্ষ থেকে এসব ঘরের ছবিসহ সহায়তার জন্য আবেদন করছে, আবেদন দেয়ার প্রক্রিয়া এখনও চলমান তাই এখনও ক্ষতিগ্রস্থদের আবেদনের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করা হয়নি। যাচাই-বাছাই শেষে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করে পর্যায়ক্রমে টেউটিনসহ সার্বিক সহায়তা দেয়া হবে। তবে একটি পরিবারকে টেউটিনসহ মোট ৭০টি পরিবারকে চালসহ বিভিন্ন রকমের ত্রান সহায়তা দেয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়া চলমান এবং যাচাই বাছাই শেষে বসতঘর ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে টেউটিন ও অর্থ সহায়তা দেয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪:৪৭:০৮ ● ৪৭৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ