পাল্টে যাচ্ছে মোংলা বন্দর জেটির অপারেশন কার্যক্রম

প্রথম পাতা » খুলনা » পাল্টে যাচ্ছে মোংলা বন্দর জেটির অপারেশন কার্যক্রম
রবিবার ● ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯


মোংলা বন্দর জেটি
শিউলী আক্তার, মোংলা প্রতিনিধি ॥
জার্মান থেকে আমদানীকৃত অত্যাধুনিক একটি মোবাইল ক্রেন পাল্টে দিয়েছে মোংলা বন্দর জেটির অপারেশন কার্যক্রম ও বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য বোঝাই কনটেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রমের গতি। জাহাজ থেকে বন্দর জেটিতে মাত্র তিন মিনিটে একটি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করছে এ মোবাইল ক্রেনটি। দ্রুত গতি সম্পন্ন এ মোবাইল ক্রেনটির অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে। বন্দরের সরঞ্জাম বহরে মোবাইল হারবার ক্রেনটি যুক্ত হওয়ার ফলে পানগাঁও বন্দর থেকে আসা কনটেইনারবাহী জাহাজ এখন থেকে হ্যান্ডলিং করবে। আর নৌ পথে আমদানী-রফতানি বাণিজ্যে মোংলা বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে পানগাঁও বন্দর। অপর দিকে আর্ন্তজাতিক নৌরুটে চলাচলকারী গিয়ার ও ক্রেন বিহীন দেশী-বিদেশী বানিজ্যিক জাহাজের কনটেইনার হ্যান্ডলিং করবে এ ক্রেনটি। এতে কনটেইনারবাহী জাহাজ ও আমাদনী-রফতানি বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়বে বন্দরের রাজন্ব আয়ও।

বন্দর সূত্র জানায়, গত ২৬ জার্মানের রোসটেক বন্দর থেকে আমদানী করা অত্যাধুনিক মোবাইল ক্রেনটি জুন আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাইফ পাওয়ার টেক লিঃ মোংলা বন্দরে সরবরাহ করে। এতদিন বন্দরে পড়ে থাকার পর ১৪ সারি কন্টেইনার বোঝাই গিয়ারসেলস জাহাজ হ্যান্ডলিং এবং সর্বোচ্চ ৮৪ টন উত্তোলন ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন এ ক্রেনটি বন্দরের ৯ নম্বর জেটিতে অপারেশনাল করা হয়। বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টায় বন্দরে আগত সিঙ্গাপুর পতাকাবাহী ‘এম ভি কোটা রিয়া’ জাহাজ থেকে কন্টেইনার খালাস করে এর অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হয়। বন্দরের যান্ত্রিক ও তড়িৎ বিভাগের উপ প্রধান প্রকৌশলী এবং প্রকল্প পরিচালক মাহাবুবুর রহমান মিনা জানান, ৬৪ টি চাকাযুক্ত এই ক্রেনটি বন্দর জেটির লোড সহনশীলতার সীমার মধ্যে ৫ থেকে ৯ নম্বর জেটি বরাবর চলাচল করতে পারবে। এটি দিয়ে ৩৬ টি কন্টেইনারবাহী জাহাজ ও বার্জ হ্যান্ডলিং এর মাধ্যমে বন্দরে ১২ কোটি টাকারও বেশি অর্থ আয় হবে বলেও তিনি জানান। মিনা আরও জানান, ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে গত ২৬ জুন আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাইফ পাওয়ার টেক লিঃ অত্যাধুনিক এই মোবাইল ক্রেনটি মোংলা বন্দরে সরবরাহ করে। চার’শ টন ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন এই ক্রেনটি জার্মানের রোসটেক বন্দর থেকে আমদানী করা হয়।

অপারেশন কার্যক্রম উদ্বোধনের সময় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ইয়াসমিন আফসানা, সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন খান, পরিচালক ট্রাফিক মোঃ মোস্তফা কামাল, সচিব মোঃ ওহিউদ্দিন চৌধুরী, সিভিল ও হাইড্রোলিক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ শওকত আলী, যান্ত্রিক ও তড়িৎ বিভাগের উপ প্রধান এবং প্রকল্প পরিচালক মাহাবুবুর রহমান মিনা, সহকারী ট্রাফিক ম্যানেজার মোঃ সোহাগ, মোঃ কুদরত আলী, মেকানিক্যাল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ সোহেল রানা ও উপ সচিব মোঃ মাকরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

ক্রেনটির আমদানীকার প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাইফ পাওয়ার টেক লিঃ এর খুলনা বিভাগের রিজোনাল ম্যানেজার মোঃ কামাল ফারুকী জাহান জানান, মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও গতিশীল করতে প্রথম বারেরমত অত্যাধুনিক এই মোবাইল হারবার ক্রেনটি আমদানী করা হয়েছে। এটি দিয়ে বন্দরে স্প্রেডার অপারেশন, গ্রাব অপারেশন এবং হুক অপারেশন করা হবে। মূলত কন্টেইনার অপারেশন কাজে এ ক্রেনটি সরাবরাহ করা হয় বলেও জানান তিনি। যা আগে মোংলা বন্দরে ছিলনা।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন খান জানান, অত্যাধুনিক এ মোবাইল ক্রেনটি মাত্র ৩ মিেিনট একটি কনটেইনার জাহাজে লোডিং-আনলোডিং করতে সক্ষম। আর প্রতি ঘন্টায় করবে ২০টি কনেটেইনার।   ক্রেনটি সংযোজনের ফলে মোংলা বন্দরে অনেক গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং অনেক উপর থেকে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করতে পারবে। একই সাথে বন্দরে আগত যেসব জাহাজের ক্রেন থাকেনা, এ ক্রেনের সাহায্যে সেগুলো থেকে পণ্য লোড আনলোডিং করাতে সহজ হবে মোবাইল হারবার ক্রেনটি সরঞ্জাম বহরে যুক্ত হওয়ার ফলে বিদ্যমান জেটিতে বছরে অতিরিক্ত ৩৬ টি কন্টেইনারবাহী জাহাজ ও বার্জ হ্যান্ডলিং এর মাধ্যমে ১২ কোটি টাকার অধিক অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করা সম্ভব হবে মর্মে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে এবং সামগ্রিকভাবে বন্দরের কার্যক্রম অধিক গতিশীল হবে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক ট্রাফিক মোঃ মোস্তফা কামাল, জানান, ৬৪ টি চাকাযুক্ত এই ক্রেনটি বিদ্যমান  জেটির লোড সহনশীলতার সীমার মধ্যে ৫-৯ নং জেটি বরাবর চলাচল করতে পারবে। ক্রেনটি দ্বারা তিনটি মুডে অপারেশন করা যাবে যথা স্প্রেডার অপারেশন, গ্রাব অপারেশন ও হুক অপারেশন। মূলত কন্টেইনার অপারেশন কাজে মোবাইল হারবার ক্রেনটি ব্যবহারের উদ্দেশ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। বুমটি ৪৮ মিটার দীর্ঘ হওয়ায় খুব সহজে ১৪ সারি কন্টেইনার বোঝাই গিয়ারলেস জাহাজ হতে কন্টেইনার খালাস/বোঝাই করতে পারবে। ৪০ মিটার কার্যকারী রেডিয়াসে অটোমেটিক স্প্রেডার এর নিচে সর্বোচ্চ ৩২ টন লোড হ্যান্ডলিং এ সক্ষম ক্রেনটির সর্বোচ্চ উত্তোলন সক্ষমতা ৮৪ টন। এছাড়াও পানগাঁও বন্দরের কন্টেইনার বার্জ কার্গোর জাহাজের মাধ্যমে মোংলা বন্দরে এনে হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে । সমুদ্রগামী গিয়ারলেস জাহাজ হ্যান্ডলিং এর জন্য ব্যবহার করা যাবে । ডেরিক ক্রেন সম্বলিত জাহাজের ক্রেন অচল হলে উক্ত জাহাজের কন্টেইনার আলোচ্য  মোবাইল ক্রেন দ্বারা হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। ৩.৫ মিটার ওয়াকিং রেডিয়ামে সর্বোচ্চ ৮৪ মেঃটন ও গ্রাফের    মাধ্যমে লুজ মালামাল হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে।

বন্দরের ট্রাফিক ও যান্ত্রিক বিভাগ সূত্র জানায়, মোংলা বন্দরের সরঞ্জাম বহরে মোবাইল হারবার ক্রেনটি যুক্ত হওয়ার ফলে পানগাঁও বন্দর থেকে আসা কনটেইনারবাহী জাহাজ এখন থেকে হ্যান্ডলিং করা যাবে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায় মোবাইল হারবার ক্রেনটি সরঞ্জাম বহরে যুক্ত হ্ওয়ার ফলে বর্তমান জেটিতে বছরে অতিরিক্ত ৩৬টি কনটেইনারবাহী জাহাজ ও বার্জ হ্যান্ডলিং এর মাধ্যমে ১২ কোটি টাকার অধিক বাড়তি অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। এছাড়া ৬৪টি চাকাযুক্ত ক্রেনটি বিদ্যমান জেটির লোড সহনশীলতার সীমার মধ্যে ৫ ও ৯ নং জেটি বরাবর চলতে পারবে। ক্রেনটি দ্বারা তিনটি মুডে অপারেশন করা যাবে। যথা স্প্রেডার অপারেশন, গ্রাব অপারেশন ও হুক অপারেশন। ২০২১ সালে পদ্মা সেতুর নির্মান কাজ শেষ হলে মোংলা বন্দরের উপর যে চাপ পড়বে তা মোকাবেলার সক্ষমতা অর্জনের প্রস্তুতি হিসেবে এ মোবাইল হারবার ক্রেনটি সংগ্রহ করা হয়েছে।

কেএস

বাংলাদেশ সময়: ১৭:২৭:৩২ ● ৫৯১ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ