সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, পানিবন্দি লাখো মানুষ

প্রথম পাতা » সর্বশেষ » সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, পানিবন্দি লাখো মানুষ
বৃহস্পতিবার ● ১১ জুলাই ২০১৯


সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, পানিবন্দি লাখো মানুষ

সুনামগঞ্জ সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় এক সপ্তাহের মাথায় সুনামগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।
জেলার বেশির ভাগ উপজেলার রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদ্রাসা এমনকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সরকারি ভবনগুলোতেও পানি ঢুকে পড়েছে। চলমান বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলাবাসী। এ দুই উপজেলার রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতেও পানি ঢুকে পড়েছে। সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে এ দুই এলাকার প্রায় ৮০ শতাংশই এখন পানির নিচে। অন্যদিকে সদর উপজেলার গৌরারং, জাহাঙ্গীরনগর, সুরমা, রঙ্গারচর কোরবাননগর ইউনিয়ন, দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলার বেশকিছু ইউনিয়নেও ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে দুই দফা বাড়িঘর পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার পরও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রশাসনের কেউ কোনো ধরনের খোঁজখবর বা সহায়তা দিচ্ছে না বলে অভিযোগ জেলাবাসীর। সদর উপজেলার লালপুর গ্রামের মো. দেলোয়ার হোসেন (৩৫) জনপ্রতিনিধিদের প্রতি অভিযোগ জানিয়ে বলেন, এই লইয়া টানা দুইবার বন্যার পানির নিচে আছি। পরিবার লইয়া খাইয়া না খাইয়া থাকলেও মেম্বার, চেয়ারম্যান কোনো খবর নিছে না। ভোটের সময় আইয়া পায়ে ধরে, ভোট চায় কিন্তু আমরা যখন খুব খারাপ সময় পার করি তখন তারা দেখে না। ভোট পাইলেই আর চিনে না। একই ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের আফিয়া বেগম (৪৫) বলেন, ঘরের ভিতর কোমর পানি হওয়ায় তাঁর তিন সন্তানকে শহরে আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়েছেন। ঘরের মালপত্র রেখে তাঁরা নিজেরা যেতে পারেননি। কোমর পানির মধ্যেও সেখানেই আছেন। রান্নাবান্না কিংবা চুলাও জ¦ালাতে পারছেন না বলে জানান তিনি।
আফিয়া আরো জানান, তাঁরা খুব কষ্টে আছেন। কিন্তু দেখার কেউ নেই। মো. আলী আকবর (৫৫) নামে বয়স্ক এক ব্যক্তি বলেন, এত কম সময়ে এত দ্রুত পানি বৃদ্ধির ঘটনা তিনি এ যাবত দেখেননি। দুই-তিন ঘণ্টার ব্যবধানে দুই ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে পরিবারকে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে গেলেও এখন আর তিনি এগুলোতে যান না জানিয়ে বলেন, ওই আশ্রয়কেন্দ্রেও কেউ কোনো সহায়তা করে না। এলাকাবাসীর নানা অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় গৌরারং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফুল মিয়া বলেন, বন্যা পরিস্থিতির অবস্থা দেখতে এলাকায় গেলে মানুষজন সহায়তা চায়, খাবার চায়, আশ্রয় চায় কিন্তু আমি মানুষের দূরবস্থা দেখা ছাড়া আর কিছু করতে পারি না। কারণ সরকার থেকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে আমাদের কাছে কোনো ধরনের ত্রাণের বরাদ্দ দেওয়া হয় না। তাই আমরা মানুষের অনেক দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনেও কিছু দিতে পারি না।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতি সামাল দেওয়া ও দুর্গতদের সহায়তার আশ্বাস জানিয়ে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সমীর বিশ্বাস বলেন, ‘পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আরো বৃষ্টিপাত হলে বন্যার সৃষ্টি হবে। পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবার ও জিআর চাল বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রয়োজনমতো ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সে সব বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া বন্যা দুর্গতদের সাহায্যার্থে উদ্বারকর্মী ও চিকিৎসক দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলেও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২১:৫৫:২৫ ● ৪২৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ