রূপসা রেলসেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়েছে ৫৫ শতাংশ

প্রথম পাতা » খুলনা » রূপসা রেলসেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়েছে ৫৫ শতাংশ
বৃহস্পতিবার ● ১১ জুলাই ২০১৯


রূপসা রেলসেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়েছে ৫৫ শতাংশ

খুলনা সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৫ শতাংশ। রূপসা রেলসেতু এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা। বহুদূর থেকেও সেতুর অবয়ব চোখে পড়ছে। ইতোমধ্যে ৯২৮টি পাইলের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৮৭৬টির। সেতুর ৫৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেতু নির্মাণের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা।
সেতুর পশ্চিমপাড় বটিয়াঘাটা উপজেলার পুটিমারী ও পূর্ব পাড় খাড়াবাদ এলাকায় দিন-রাত অবিরাম চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। কাক্সিক্ষত গতিতেই এগিয়ে চলছে কাজ। দিন যতোই যাচ্ছে রূপসার বুকে একের পর এক খুঁটি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শুরু করেছে। নদীর প্রবল ¯্রােত উপেক্ষা করে উভয় প্রান্তে চলছে নির্মাণযজ্ঞ। পুরোদমে পাইল স্থাপন ও পিলার তৈরির কাজ নিয়ে কর্মযজ্ঞ চলছে বহুল প্রত্যাশিত রূপসা রেলসেতু নির্মাণ। প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে মোংলা বন্দরের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে ২০২২ সালের মধ্যে খুলনা ও মোংলা বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হবে সারাদেশের রেল যোগাযোগ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, খুলনা-মোংলা রেললাইন চালু হলে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এদিকে গত ০৪ জুলাই মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের রেস্ট হাউস পারিজাতে রেল বিভাগ ও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেছিলেন, ২০২২ সালের মধ্যেই মোংলা-খুলনা রেললাইন চালু হবে। সমুদ্রবন্দর মোংলার সক্ষমতা বাড়াতে সরকার খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেছিলেন, খুলনা-মোংলা রেলপথে যাত্রী পরিবহনসহ মোংলা বন্দরের মালামাল পরিবহন করা হবে। এ ছাড়া উত্তর অঞ্চলের পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা হয়ে ভারতের শিলিগুড়ির সঙ্গে এ রেল যোগাযোগ সরাসরি সংযুক্ত হবে। এর ফলে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বাড়বে। এর ফলে মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী বাড়বে।
গ্লোবাল খুলনার আহ্বায়ক ও প্রতিষ্ঠাতা শাহ মামুনুর রহমান তুহিন বলেন, দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলার সক্ষমতা বাড়াতে খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এই রেলপথ দিয়ে যাত্রী পরিবহনসহ মোংলা বন্দরের মালামাল পরিবহন করা হবে। মোংলা থেকে সরাসরি পণ্য নিয়ে ট্রেন যাবে ভারত-নেপাল ও ভুটানে। তিনি বলেন, খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ সম্পন্ন হলে মোংলা বন্দরে আরও গতি সঞ্চার হবে। বিভিন্ন স্থান থেকে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সহজে সুন্দরবন ভ্রমণ করতে পারবেন। এতে দেশের রাজস্ব বাড়বে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে চলছে বাংলাদেশে প্রথম সুপার স্ট্রাকচারের রেলসেতুর নির্মাণ কাজ। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশাবাদী। জানা যায়, রেলসেতুটি মোংলা বন্দরের সঙ্গে খুলনা সমগ্র বাংলাদেশের রেল সংযোগ তৈরি করবে। এটি হবে দেশের দীর্ঘতম রেলসেতু। ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন করে। পরে ২০১২ সালের নভেম্বর প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পায় ভারতের সিইজি নিপ্পন কোয়ি জেভি প্রতিষ্ঠান। ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর রূপসা রেলসেতুর পাইলিংয়ের কাজের উদ্বোধন করেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন। খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পটির কাজ ৩টি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। একটি রেলসেতু, অপরটি রেললাইন এবং অন্যটি টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং। খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৮টি স্টেশন হচ্ছে। স্টেশনগুলো- ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদ নগর, কাটাখালী, চুলকাঠি, ভাগা, দিগরাজ ও মোংলা। খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে রেললাইনের জন্য ১ হাজার ১৪৯ কোটি ৮৯ লাখ এবং সেতুর জন্য ১ হাজার ৭৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। বাকী টাকা জমি অধিগ্রহণে ব্যয় করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন (জিওবি) ও ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তায় এই রেলপথটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান লারসেন অ্যান্ড টাব্র রূপসা নদীর ওপর মূল রেলসেতুর কাজ সম্পন্ন করছে। রূপসা রেল সেতুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশন ম্যানেজার সুব্রত জানা বলেন, দ্রুতবেগেই এগিয়ে চলছে খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি দেখানো হচ্ছে ৫৫ শতাংশ। সেতু নির্মাণে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে রূপসা নদীর দু’পাড়ে। তিনি আরও বলেন, সিঙ্গেল ব্রডগেজের এ সেতুর দৈর্ঘ্য ৫ কিলোমিটার। ৯২৮টি পাইলের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৮৭৬টির। পিয়ার ক্যাপ ১৩৬টির মধ্যে ৮১টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১৪৩টি স্প্যানের মধ্যে ৬৯টি বসানো হয়েছে। পাইল ক্যাপ হয়েছে ১৪৪টির মধ্যে ৮১টির। সোমবার পর্যন্ত মোট সেতুর ৫৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২১:৪৬:৩৭ ● ৪৮১ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ