দেশজুড়ে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে পুরনো ব্যাটারি

প্রথম পাতা » বিশেষ প্রতিবেদন » দেশজুড়ে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে পুরনো ব্যাটারি
বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০১৯


---

সাগরকন্যা এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট॥
সোলার প্যানেল এবং বিদ্যুৎচালিত রিকশা ও অটোর কারণে দেশে ক্রমাগত ব্যাটারির ব্যবহার বাড়ছে। কিন্তু পুরনো ব্যাটারি সঠিক পদ্ধতিতে রিসাইক্লিং না করার কারণে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আর এখনই ওসব পুরনো ব্যাটারি রিসাইক্লিংয়ের দিকে নজর না দিলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে চড়া মূল্য দিতে হবে বলে গবেষকরা মনে করছেন। টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ( স্রেডা) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্রেডার কারিগরি সহায়তায় সরকার-স্বীকৃত নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইডকল সারাদেশে সোলার হোম সিস্টেম কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। সারা দেশেই প্রতিষ্ঠানটির ডিস্ট্রিবিউটর থাকলেও রিসাইক্লিংয়ের সুবিধা শুধু রাজধানী ও খুলনা শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আর প্রাতিষ্ঠানিক রিসাইক্লিং সেন্টারের সংকটের কারণে সোলার প্যানেলের পুরনো ব্যাটারিগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে যেসব কোম্পানি ব্যাটারি উৎপাদন করে দেশের বিভিন্ন বিভাগে তাদের রিসাইক্লিং সেন্টার চালু ও সঠিক পদ্ধতিতে পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নেয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
সূত্র জানায়, সোলার হোম সিস্টেমের ব্যাটারি সঠিক পদ্ধতিতে রিসাইক্লিংয়ের বিষয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের একটি সার্কুলার রয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, ব্যাটারি উৎপাদনকারী কোম্পানিকে পুরনো ব্যাটারিগুলোকে সোর্সে নিয়ে এসে রিসাইকেল ও ডাম্পিং করতে হবে। কিন্তু ব্যাটারি উৎপাদন কোম্পানিগুলো সরকার থেকে চাহিদামতো প্রণোদনা না পাওয়ার কারণে তা করছে না। অথচ ইতিমধ্যে দেশের দুর্গম এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছাতে প্রায় ৪৫ লাখ সোলার প্যানেল বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে ততোই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে ওসব প্যানেল। বিশেষ করে প্যানেলের ১২ ভোল্টেজ ব্যাটারি পুরনো হওয়ার পর তার অপ্রাতিষ্ঠানিক রিসাইকেল পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। পুরনো ব্যাটারির ইলেকট্রোলাইট অ্যাসিড ও সিসার কারণে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের রক্তে উচ্চমাত্রার সিসার উপস্থিতি তৈরি করছে। তাছাড়া যেসব শ্রমিক ব্যাটারি রিসাইক্লিং কারখানায় কাজ করছে তারাও মাথাব্যথা, হাত-পায়ের অবশতা, পেটব্যথা, বমিসহ নানা সমস্যায় ভুগছে।
সূত্র আরো জানায়, অধিকাংশ এলাকায় যেসব কোম্পানির কাছ থেকে ব্যাটারি কেনা হয়, আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার পর কোম্পানিগুলো সেগুলো আর সংগ্রহ করে না। ওই ধরনের বেশির ভাগ ব্যাটারি স্থানীয় দালালরা সংগ্রহ করে থাকে। ব্যাটারি কেনার জন্য ওসব এলাকায় বড় একটি চক্রও গড়ে উঠেছে রয়েছে। তারা পুরনো ব্যাটারি সাধারণত ওজন দরে কিনে নেয়। কিন্তু অবৈধ ও অপেশাদার হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ওসব পুরনো ব্যাটারি কেনার সময় তার মধ্যকার ইলেকট্রোলাইট অ্যাসিড ও সিসা খোলা জায়গা, রাস্তা, ড্রেন ও জলাধারে ফেলে দেয়। পুরনো ব্যাটারির প্রতি ৪০ কেজি ছাইয়ের মধ্যে ৫ কেজিই ডাস্টবিনে ফেলা হয়, যার প্রায় ৬০ শতাংশই সিসা। বর্তমানে সোলার হোম সিস্টেমে যেসব ব্যাটারি রয়েছে, সেগুলো দুই থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছর ব্যবহার করা যায়। তারপর ভোক্তাদের তা রিসাইক্লিং করতে হয়। ওই হিসাবে ২০২০ সালের মধ্যে ২২ হাজার ১১৯ টন বর্জ্য তৈরি হবে। যার মধ্যে ১২ হাজার ৪০৩ টন হবে ইলেকট্রোলাইট অ্যাসিড ও ৮৪০ টন সিসা।
এদিকে এক গবেষণায় বলা হয়েছে, খোলা জায়গা ও জলাধারে পুরনো ব্যাটারির সিসা ও অ্যাসিড নিক্ষেপের কারণে জমি ও ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত হচ্ছে। আর এভাবে দূষণ বাড়তে থাকলে বাংলাদেশে পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও সামাজিক সংকট দেখা দিতে পারে। এ প্রসঙ্গে গবেষক অধ্যাপক ড. মো. হেলাল উদ্দিন আহমেদের মতে, পরিবেশের ঝুঁকি এড়াতে হলে লেড অ্যাসিডবিহীন ব্যাটারি ব্যবহারের দিকে যেতে হবে। তাছাড়া সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, সোলার সেলের বিদ্যুৎ তাৎক্ষণিক ব্যবহারের দিকে জোর দিতে হবে। স্টোর করা যাবে না। সেজন্য মিনি গ্রিড ও নেট মিটারিংয়ের দিকে যেতে হবে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে স্রেডা সদস্য সিদ্দিক জোবায়ের জানান, রহিমআফরোজ ও হ্যাম্পোর মতো বড় কোম্পানিগুলো আঞ্চলিক অফিস করেছে। তারা সেখানে রিসাইক্লিং করে থাকে। কিন্তু কমপ্লায়েন্স কম থাকার কারণে অধিকাংশ সোর্স কোম্পানি ওসব ব্যাটারির দায়দায়িত্ব নেয় না। সেজন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের আরো নজরদারি বাড়ানো দরকার।

বাংলাদেশ সময়: ৯:৪৯:৩১ ● ৭৩১ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ