ক্রাইস্টচার্চ: নিহত যাদের সম্পর্কে জানা গেছে

প্রথম পাতা » বিশ্ব » ক্রাইস্টচার্চ: নিহত যাদের সম্পর্কে জানা গেছে
রবিবার ● ১৭ মার্চ ২০১৯


---

সাগরকন্যা আন্তর্জাতিক ডেস্ক॥

নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে হামলায় ৪৯ জন নিহত হয়েছেন এটি নিশ্চিত হয়েছে, কিন্তু সরকারিভাবে এখনও পর্যন্ত কারও নাম প্রকাশিত হয়নি। কর্মকর্তারা এখন নিহতদের শনাক্ত করার কঠিন কাজটি করছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। তবে নিহতরা যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সেখানে গিয়েছিলেন সেটি ইতোমধ্যেই পরিষ্কার হয়ে গেছে। তাদের মধ্যে অনেকে শরণার্থী ছিলেন, যারা ভেবেছিলেন নিউ জিল্যান্ডে আসায় তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। অনেক পরিবার যারা তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করতে পারেননি ভয়ানক শঙ্কিতভাবে খবরের জন্য অপেক্ষা করছেন। এখানে কিছু লোকের কথা তুলে ধরা হল যারা মারা গেছেন অথবা এখনো নিখোঁজ বলে খবর হয়েছে। ডিন্স এভিনিউর আল নূর মসজিদে গুলি শুরু হওয়ার পর থেকে মাত্র তিন বছর বয়সী মুকাদকে আর দেখা যায়নি। ভাই আব্দি ও বাবার সঙ্গে মসজিদে গিয়েছিল মুকাদ, কিন্তু বাবা ও ভাই পালাতে পারলেও তার কোনো খোঁজ নেই। ঘটনার পর পরিবারের সদস্যরা ক্রাইস্টচার্চ হাসপাতালে গিয়ে খোঁজাখুঁজি করেছে, কিন্তু মুকাদ কোথায় সে সর্ম্পকে কোনো ধারণাই পায়নি।  নিহতদের মধ্যে যিনি প্রথমে শনাক্ত হতে পারেন তিনি দাউন নবি। আফগানিস্তানে জন্ম নেওয়া নবি ১৯৮০-র দশকে সোভিয়েতের আক্রমণ থেকে পালিয়ে নিউ জিল্যান্ডে তার পরিবারের কাছে চলে গিয়েছিলেন। পুরনো গাড়ির প্রতি তার দুর্বলতা ছিল। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার হলেও নিউ জিল্যান্ডে অবসরে যান কমিউনিটি নেতা হিসেবে। স্থানীয় এক আফগান সংঘের সভাপতি ছিলেন তিনি। অন্যান্য অভিবাসী গোষ্ঠীগুলোর সমর্থক হিসেবেও তার পরিচিতি ছিল। মসজিদের ভিতরে ঢুকে বন্দুকধারী সন্ত্রাসী যখন গুলি শুরু করে অন্যান্যের বাঁচাতে তিনি তখন গুলির সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়।
বড় হয়ে একজন ফুটবলার হতে চেয়েছিলেন সৈয়দ মিলনে। শুক্রবার মায়ের সঙ্গে আল নূর মসজিদে গিয়েছিলেন তিনি। শনিবার নিউ জিল্যান্ডের গণমাধ্যমকে তার বাবা বলেন, “সরকারিভাবে তার মৃত্যু সংবাদ এখনও শুনিনি কিন্তু আমি জানি সে নেই কারণ তাকে দেখা গেছে। “জন্মের সময়ই সে প্রায় মারা যাচ্ছিল, ছোট্ট সাহসী সৈনিক। এটা দেখতে পাওয়া খুব কঠিন যে সে এমন একজনের গুলিতে মারা যাচ্ছে যে কারো বা কোনো কিছুর পরোয়া করে না। “আমি জানি সে কোথায় আছে। আমি জানি সে শান্তিতে আছে।” মিলনের সৎ বোন ব্রাইডি হেনরি এর আগে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শেষবার তাকে ‘মসজিদের রক্তাক্ত মেঝেতে পড়ে থাকতে’ দেখা গেছে, ‘তার শরীরের নিচের অংশ থেকে রক্ত বের হচ্ছিল’। পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ থেকে নিউ জিল্যান্ডে গিয়েছিলেন নায়িম রশিদ। ক্রাইস্টচার্চে শিক্ষকতা করতেন তিনি।  আল নূর মসজিদের হামলার ভিডিওতে একপর্যায়ে নায়িম রশিদকে বন্দুকধারীকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায়। মারাত্মক আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। পরে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে। ব্যাপকভাবে তাকে বীরের মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে।  তার ভাই বলেছেন, ভিডিওতে রশিদের পদক্ষেপ দেখার পর গর্ববোধ করেছেন তিনি, কিন্তু তার মৃত্যুতে অঙ্গহানির ব্যথা অনুভব করছেন তিনি। তালহা নায়িম রশিদের বড় ছেলে। তাদের পরিবার যখন নিউ জিল্যান্ডে আসে তখন তার ১১ বছর বয়স ছিল। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার মৃত্যুও নিশ্চিত করেছে।
বন্ধুরা জানিয়েছেন, তালহা নতুন চাকরি পেয়েছিলেন এবং শিগগিরই বিয়ে করার আশা করছিলেন। নায়িম রশিদের আরেক ছেলেও আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ক্রাইস্টচার্চে দুই বাংলাদেশির নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এদের মধ্যে একজন হুসনে আরা পারভীন। সিলেটের গোলাপগঞ্জের জাঙ্গালহাটা গ্রামের নুরুদ্দিনের মেয়ে পারভীন স্বামী ফরিদ উদ্দিনসহ কয়েক দশক ধরে ক্রাইস্টচার্চে ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হুসনে আরা আল যখন গুলির শব্দ পান তখন তিনি নূর মসজিদের নারীদের অংশে ছিলেন। তার স্বামী ফরিদউদ্দিন পুরুষদের অংশে ছিলেন এবং তিনি হুইল চেয়ার ব্যবহার করতেন। তার ভাইপো বাংলাদেশের নিউ এইজ সংবাদপত্রকে বলেন, “গুলির শব্দ শোনামাত্রই স্বামীকে রক্ষা করতে সেদিকে এগিয়ে যান তিনি, কিন্তু গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।” তার স্বামী বেঁচে আছেন বলে জানা গেছে।

প্রতি শুক্রবার হুসেইন আল উমারি আল নূর মসজিদে শুক্রবারের নামাজ পড়ার পর রাতের খাবার খাওয়ার জন্য তার বাবা-মার বাসায় যেতেন। বৃহস্পতিবার বাবা-মার সঙ্গে তার শেষ কথা হয়। তারা নতুন গাড়ি কেনায় সে উৎফুল্ল ছিল।  ১৯৯০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে সন্তানসহ হাজিম আল উমরি ও জান্না ইজাত নিউ জিল্যান্ডে এসেছিলেন। হামলার পর থেকে ছেলের আর কোনো খবর পাননি তারা। এদের পাশাপাশি ইন্দোনেশীয় লিলিক আবদুল হামিদ, নাম না জানা আরও এক আফগান, আরও চার পাকিস্তানি সোহাইল শহিদ, সৈয়দ জাহানদাদ আলি, সৈয়দ আরীব আহমেদ এবং মাহবুব হারুন, চার সোমালীয় নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। পাশাপাশি জর্দান, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ফিজি ও সৌদি আরবের বেশ কয়েকজন নাগরিক এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ৮:৫০:২৭ ● ৫৭৪ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ