কুয়াকাটা সৈকতের জীববৈচিত্র রক্ষায় ব্লু গার্ড

প্রথম পাতা » কুয়াকাটা » কুয়াকাটা সৈকতের জীববৈচিত্র রক্ষায় ব্লু গার্ড
রবিবার ● ১১ জুলাই ২০২১


কুয়াকাটা সৈকতের জীববৈচিত্র রক্ষায় ব্লু গার্ড

কুয়াকাটা সাগরকন্যা অফিস॥

যে হাতে শুধুই ধ্বংস হতো সামুদ্রীক ও প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র, সে হাতেই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে কুয়াকাটা সৈকত। এমনই ১১ জন ব্লু গার্ড সদস্য বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন নয়নাভিরাম সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায়। কেবলমাত্র জীবিকার প্রয়োজনে উদাসীন থাকা মানুষগুলোর ঘুরে দাাঁড়ানোই নয়, তাদের স্বেচ্ছাশ্রমে প্রকৃতিতে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে পশ্চিমে লেম্বুরবন পর্যন্ত ১৩ কিঃমিঃ সৈকত পাহাড়ায় নিয়োজিত ব্লু গার্ডে স্বেচ্ছাসেবীদের কার্যক্রম চলমান লকডাউনের মধ্যেও নজর কেড়েছে। ফলে অসাধু জেলেরা ঘন জাল দিয়ে রেনুপোনা নিধনের সাহস হারিয়েছে। এমনকি সৈকতে প্লাস্টিক বর্জ্যে জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট করতে না পারারও নজির সৃষ্টি করেছে তাঁরা। ইতোমধ্যে এসব অপচনশীল বর্জ্য সৈকত থেকে তুলে বস্তায় ভরে নির্দিষ্ট স্থানে সরিয়ে ফেলার কাজও শুরু করেছেন তাঁরা।
বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ওায়ার্ল্ড ফিস বাংলাদেশ’র ইকো ফিস-২ প্রকল্পের আওতায় পটুয়াখালী জেলার সামুদ্রিক জীববৈচিত্র সংরক্ষণে সহকারি গবেষক সাগরিকা স্মৃতি’র তত্ত্বাবধানে ৯ জুলাই থেকে ব্যতিক্রমী কাজটি করছেন ব্লু গার্ড। রবিবার কথা হয় ব্লু গার্ড সদস্য পঞ্চাশোর্ধ আজিজ আকনের সাথে। তিনি জানালেন, এক সময় জীবিকার প্রয়োজনে কুয়াকাটা সৈকতে মশারির নেট দিয়ে রেনুপোনা শিকার করতেন। গলদার রেনু সংগ্রহের নামে নানা প্রজাতির মাছ মারা পড়তো তাদের হাতে। সংরক্ষিত বন জঙ্গলের গাছ কেটে লাকড়ি হিসেবে বাজারে নিয়ে বিক্রি করায় ধ্বংস হচ্ছিল বন। কয়েক দিন আগে ওয়ার্ল্ড ফিসের একটি কর্মশালায় প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছিলেন আজিজ আকনসহ তার সঙ্গীরা। সেখানেই বুঝতে পেরেছেন রেনু পোনা ধরলে মৎস্য ভান্ডারে কি কি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। প্রাকৃতিক ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র ধ্বংসে মানবসৃষ্ট দূর্যোগ হয়। আজিজ আকন আরও জানান, নিজে সচেতন হয়ে অপরকে সচেতন করতে তাঁর সাথে স্বেচ্ছায় আরও যুক্ত হয়েছেন কুয়াকাটার ইউসুফ হাওলাদার (৩৪), খলিল (৩০), নুর জামাল (৪০) ইমরান হোসেন (৩২), মেহেদী(৩০), মনির হোসেন (৩১), মনির (৩৫),  সাইদুল (৩০), বেল্লাল (৩৬) ও হাবীব মুন্সী (৪০)। গত তিনদিন ধরে এ সচেতনতামূলক কাজটি করতে গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাও জানালেন ব্লু গার্ড সদস্য নুর জামাল। যারা রেনুপোনা ধরছে সবাই পরিচিত মুখ। তাদের নানাভাবে রেনুপেনা ধরার কুফল সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিরস্কারের শিকার হচ্ছেন। এসব থেকে অসাধু রেনুপোনা শিকারীদের নিভৃত করতে নুর জামাল বলেন, ‘যাগো হাতে আইন রইছে হ্যারা যদি আমাগো কামে (কাজে) সহযুগীতা করে তয়হেলে আমাগো কামে সফলতা পামু।’
এসব বিষয়ে কথা হয় কুয়াকাটা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মাহমুদের সাথে। তিনি জানালেন, ব্লু গার্ড নামের একটি গ্রুপ সৈকতে স্বেচ্ছাশ্রমে সামুদ্রীক ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করছে। এক্ষেত্রে কুয়াকাটা নৌ পুলিশ তাদের পাশে থাকবে। ওয়ার্ল্ড ফিস বাংলাদেশ’র ইকো ফিস-২ প্রকল্পের পটুয়াখালী জেলার সামুদ্রিক জীববৈচিত্র সংরক্ষণে সহকারি গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, সমুদ্রে চলছে মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। সামুদ্রিক মাছের প্রজনন নিশ্চিত হলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি চিংড়ির রেনু শিকার করতে গিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের লাখ লাখ রেনু ধ্বংস হচ্ছে। সেজন্য সুবিধাভোগী প্রশিক্ষিত কুয়াকাটার ১১ জেলেকে উদ্বুদ্ধ করে মাঠে নামাতে ব্লু গার্ড গঠন করেছি।

এনইউবি/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২১:৩৩:০২ ● ৩৮০ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ