করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত কুয়াকাটার ব্যবসা-বাণিজ্য

প্রথম পাতা » কুয়াকাটা » করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত কুয়াকাটার ব্যবসা-বাণিজ্য
বৃহস্পতিবার ● ১৩ মে ২০২১


করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত কুয়াকাটার ব্যবসা-বাণিজ্য

মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া সাগরকন্যা অফিস॥

বৈশি^ক মহামারি করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে লকডাউনের প্রেক্ষিতে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার সকল শ্রেণির ব্যবসা-বাণিজ্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পহেলা এপ্রিল থেকে সরকারি বিধিনিষেধের কারণে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা বন্ধ রয়েছে। কুয়াকাটা সৈকতে এখন সুনসান নীরবতা। ফলে পর্যটন নির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধের কারণে এখন তাঁদের ঈদ উৎসব ভেস্তে গেছে। লোকসানের বোঝায় সবাই কাহিল হয়ে গেছেন। হোটেল-মোটের, রেস্টহাউস-গেস্টহাউস থেকে শুরু করে রিসোর্ট সেন্টার, খাবার হোটেল-রেস্তরা, চায়ের দোকান, ঝিনুক, কাপড়-চোপড়, শুটকিসহ পাঁচ শতাধিক দোকানি এখন দুই চোখে সর্ষেফুল দেখছেন। একই দশায় আড়াই শতাধিক বাণিজ্যিক ফটোগ্রাফার, ট্যুরিস্ট এসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার প্রায় ৪০ জন সদস্য, ট্যুর গাইড এসোসিয়েশেন এর ৩০ সদস্য, সিপডবোট, ওয়াটার বাইক, প্যারাসাইলিং, কাঁকড়া-মাছ ফ্রাইয়ের দোকানি, ছাতা-বেঞ্চিসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদে দোকানিরা এখন আর ধকল সইতে পারছেন না। এদের জীবন-জীবীকায় এক মহা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। পর্যটন সম্পৃক্ত এসব ব্যবসায়ী এখন পর্যটন কেন্দ্রে আরোপিত বিধি নিষেধ তুলে নেয়ার দাবি করেছেন। অন্তত পাঁচ হাজার মানুষের ঈদের উৎসব অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সরেজমিনে খোঁজ-খবর নিয়ে এসব ব্যবসায়ীসহ সাধারণ কর্মীদের দুর্দশার কথা জানা গেছে।
আধুনিক সুবিধা সংবলিত আবাসিক হোটেল গ্রেভার-ইন। হোটেলটিতে রয়েছে ২৩ জন স্টাফ। হোটেলের ব্যবস্থাপক সজ্জাদ আহমেদ মিদুল জানান, করোনার প্রথম দফা লকডাউনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু ফের দ্বিতীয় দফার লকডাউনে গত প্রায় দেড় মাসে অন্তত নয় থেকে সাড়ে নয় লাখ টাকার লোকসান গুনতে হয়েছে। যেখানে ১০-১২ লাখ টাকা লাভ হওয়ার কথা। কর্মচারীদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিচ্ছেন। এছাড়া রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়। অত্যাধুনিক সুবিধা সংবলিত আরেক আবাসিক হোটেল খান প্যালেস। এর পরিচালক মোঃ রাসেল খান জানালেন, ২৫ জন স্টাফ বসিয়ে রেখে তিন লাখ টাকা বেতন দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি গুনেছেন। জানালেন রাসেল, করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধিসহ সকল ধরনের প্রশিক্ষন নেয়া রয়েছে তাঁদের হোটেলের কর্মীদের। প্রথম দফার লকডাউনের পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল-মোটেল খুলে দেয়ায় কোন সমস্যা হয়নি। এখন লোকসানের বোঝায় কাহিল হয়ে গেছেন। ধার-দেনা করে কর্মীদের বেতন দিয়েছেন। কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশন এর সেক্রেটারি জেনারেল মোতালেব শরীফ জানালেন, তাাঁদের সংগঠনের সদস্যভুক্ত ৭২টিসহ প্রায় দেড় শ’ আবাসিক হোটেল-মোটেল রয়েছে কুয়াকাটায়। প্রত্যেকের এই দফায় গড়ে পাঁচ থেকে ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন সকলের বেহাল দশা। তিনি দাবি করলেন পর্যটন খাতের সকল পেশার ক্ষতির পরিমান প্রায় হাজার কোটি টাকা। এরা সবাই করোনাকালীন বিধি নিষেধ শিথীল করে সব খুলে দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসনকে বিবেচনা করার কথা বললেন। একইভাবে কুয়াকাটায় অন্তত ২৫০ বাণিজ্যিক ফটোগ্রাফার এখন বেকার রয়েছেন। এদের প্রত্যেকের দৈনিক দুই থেকে তিন হাজার টাকা আয় ছিল। যা দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে আছেন মহাসঙ্কটে। টোয়াকের সদস্যরা জানান, যেখানে মাসে ৪০-৫০ হাজার টাকা লাভ হওয়ার কথা। সেখানে ধার-দেনা করেও চলছেনা। একই দশায় ট্যুরিস্ট বোট মালিক-কর্মচারীদের, স্পিডবোট মালিক-কর্মীদের দশাও এক। ছাতা-বেঞ্চির মালিক, ভাড়াটে মোটরসাইকেল-অটো চালকদের দশাও বেহাল। ২০০-২৫০ টি ক্ষুদে দোকানি, কাঁকড়া-মাছ ফ্রাইয়ের ২০-২৫ দেকানি, ডাব, শুটকির অন্তত ৩০ দোকানি, ঝিনুক-আঁচার বিক্রেতা দোকানি রয়েছে প্রায় দেড়শ’। এমন দশা হয়েছে যে আর্থিক সঙ্কটে কুয়াকাটা রাখাইন মহিলা মার্কেটের ১৪টি দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন দোকানিরা। করোনার প্রভাবে লকডাউনের কারণে কুয়াকাটার পর্যটন কেন্দ্রীক ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত অন্তত মালিক-কর্মচারী মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকার পথ রুদ্ধ হয়ে আছে। এখন স্থায়ীভাবে বন্ধের উপক্রম হয়েছে। এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা সরকারের বিশেষ প্রণোদনা দাবি করেছেন।

এমইউএম/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২২:১৫:৪৭ ● ৪৯০ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ