পায়রা মহাপরিকল্পনা

প্রথম পাতা » সম্পাদকীয় » পায়রা মহাপরিকল্পনা
রবিবার ● ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৯


---

পায়রায় তৃতীয় সমুদ্রবন্দর ও ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের প্রেক্ষাপটে সুবিশাল এক মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। এর জন্য প্রথম পর্যায়ে অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে ৬ হাজার ৫শ’ একর জমি। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বন্দর ও বিদ্যুত কেন্দ্রের পাশাপাশি নির্মাণ করা হবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল, তেল পরিশোধনাগার, রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ইত্যাদি। নেদারল্যান্ডসের রয়েল হাসকনিং ডিএইচভি এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) গবেষণা পরীক্ষা ও পরামর্শক ব্যুরো যৌথভাবে এই মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। একটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার। এর জন্য সময়ের প্রয়োজন হবে ১৮ মাস। আশা করা হচ্ছে, আগামি পাঁচ বছরের মধ্যে পায়রাকে ঘিরে দেশে নতুন অর্থনৈতিক মেরুকরণ সম্পন্ন হবে। পায়রা হবে আধুনিক এবং শতভাগ ব্যবহারোপযোগী একটি নৌবন্দর। যৌথভাবে নির্মিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রটিও হবে পরিবেশবান্ধব। বন্দরটি কেবল বাংলাদেশ নয়, সার্কভুক্ত দেশসহ চীনও যাতে ব্যবহার করতে পারে সেটি বিবেচনায় রাখা হবে। এর মাধ্যমে বৈদেশিক বিনিয়োগের পথ সুগম হবে। ইতোমধ্যে ভারত ও চীন বন্দর নির্মাণে সহায়তাদানে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সরকার ঘোষিত মেগা বিদ্যুত প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্র। কয়লাভিত্তিক এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রটির ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। যেটি সবচেয়ে আশার খবর তা হলো, এর ব্যয় নির্বাহ বাবদ চীনের এক্সিম ব্যাংক ৪৩০ মিলিয়ন ডলার ইতোমধ্যে জমা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। বাংলাদেশে এটি সবচেয়ে বড় চৈনিক বিনিয়োগ। উল্লেখ্য, বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মিত হচ্ছে বাংলাদেশ-চীন সমান সমান অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে। চলতি বছরের মাঝামাঝি শুরু হবে এর যন্ত্রপাতি সংযোজনের কাজ। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে এর উৎপাদনে যাওয়ার কথা রয়েছে। চীন, অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে এর কাঁচামাল কয়লা আমদানি করা হবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি যথাসম্ভব পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।
ইতোমধ্যে পায়রা সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম দৃশ্যমান হচ্ছে ক্রমশ। দেশ-বিদেশের পণ্যবাহী জাহাজ ভিড়ছে, ছেড়ে যাচ্ছে, রাজস্ব আদায় হচ্ছে নিয়মিত। এমনকি যেসব জাহাজ এখান দিয়ে যাওয়ার সময় অতিক্রম করে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা তারাও টোল দিয়ে যাচ্ছে। কর্মসংস্থান হয়েছে বহু লোকের। আগামীতে বন্দরটি আরও সচল ও ব্যবহার্য হলে বাড়বে কর্মচাঞ্চল্য। চাপ কমবে চালনা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে। মাত্র কয়েক বছর আগে ২০১৩ সালের নবেম্বরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় টিয়াখালীতে এর সূচনা করেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।
চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক নৌ-বাণিজ্যের অঙ্গনেও। এই বন্দরে জাহাজ ভিড়তে এবং পণ্য খালাস করতে অত্যধিক সময় লাগে। কাস্টমসের ঝামেলাও অনেক এবং শ্লথগতিসম্পন্ন। ফলে বিশ্বের যে কোন বন্দরের চেয়ে এখানে পণ্য আমদানি-রফতানিতে ব্যয় অনেক বেশি হয়। জাহাজ ভাড়াও বেড়ে যায় সে কারণে। পণ্যের দামও বেড়ে যায় বহুগুণ। সর্বোপরি নাব্য সঙ্কটে বর্তমানে আরও সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে বন্দরের প্রবেশমুখ। ফলে জরুরীভিত্তিতে চালনা ও পায়রা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোসহ আরও একাধিক বিকল্প বন্দর তথা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। পায়রা বন্দর ও বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মিত হলে এর সক্ষমতা বাড়বে বহুগুণ। বাংলাদেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির মহাসড়কে অবস্থান করছে, যা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০৪১ সাল নাগাদ জাতীয় প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিটে রূপান্তরিত হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১০:৩৮:১৪ ● ৯৫৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ