কলাপাড়ায় আবাসন-আশ্রয়ন ব্যারাক হাউসের জীর্ণদশা

প্রথম পাতা » বিশেষ প্রতিবেদন » কলাপাড়ায় আবাসন-আশ্রয়ন ব্যারাক হাউসের জীর্ণদশা
শনিবার ● ৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯


---

মেজবাহউদ্দিন মাননু, সাগরকন্যা প্রতিবেদন॥

নামেই বসতঘর। চাল নেই। বেড়া নেই। দরজা-জানালা নেই। চালের ভাঙ্গা টিনের নিচে পলিথিন দিয়ে কোনমতে রাত-দিন কাটছে নির্মাণ শ্রমিক তরুন বয়সী মো. শাহীন ও তার বিধবা মা সেলিনা বেগমের। মা ছেলের এমন দুর্বিসহ দিনাতিপাত চলছে সিডরের পর থেকে। থাকতেন বেড়িবাঁধের স্লোপে। ঝুপড়ি ঘরটি সিডর কেড়ে নিয়েছে। এরপরে নামকাওয়াস্তে এ ঘরটিতে, একটি কক্ষে। আবাসনের ব্যরাকের ২০ নম্বর কক্ষ এটি। এরপরে ব্যারাকটির প্রায় এক/দেড় শ’ ফুট শুধু চালের খালি এ্যাঙ্গেলগুলো কঙ্কালের বুকের খাঁচার মতো দেখাচ্ছে। সীম গাছে ঢেকে গেছে। কোন ঘর নয়। দুর থেকে মনে হয় সীম গাছের মাচান। এরইমধ্যে এক নম্বর কক্ষে থাকছেন রেজাউল মীর। চার জনের সংসারে থাকার আর কোন উপায় নেই। একই দশা ইয়াকুব মীরের চার জনের সংসার। থাকছেন পাঁচ নম্বরে। এদের মধ্যে রেজাউল নির্মাণ শ্রমিক আর ইয়াকুব অটো বাইক চালায়। চোখে না থাকলে বোঝার উপায় নেই এদের বসতঘরের দূর্গতির ধরন। জানালেন এরা, সিডরের পরে আইলার ভয়াল তান্ডবের পরে গৃহপুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১০ কক্ষের দুইটি ব্যারাক হাউস করা হয়েছিল। এখন কোন উপায় না থাকায় তিনটি পরিবার থাকছেন। বাকি সব চালের শুধু এ্যাঙ্গেল রয়ে গেছে। খুটিগুলোও ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। যেন কঙ্কাল। ২০ কক্ষের ব্যারাক হাউসটির এমন হাল। টয়লেট নেই। টিউবওয়েল বসানো হয়নি। অথচ বিল তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার, এমন অভিযোগ লোকজনের। একটি টিউবওয়েলের বডি না থাকলেও ওর সঙ্গে সংযোগ দিয়ে এক প্রভাবশালী মোস্তাফিজুর রহমান তার বাড়িতে লাইন নিয়েছেন। শাহীন জানান, নিজেদের টাকায় মাটি কেটে ভিটি উচু করেছেন। চলাচলের পথ নেই। বর্ষায় থাকতে পারেন না। অমাবস্যা-পূর্ণিমার অস্বাভাবিক জোয়ারে ভাসেন। দায় ঠেকেই থাকছেন তিনটি পরিবার। যথাযথ রক্ষণাবেক্ষন না করায় সরকারি অর্থায়নে দরিদ্র, ছিন্নমূল মানুষকে গৃহপুনর্বাসনের মহতি উদ্যোগ এখন ভেস্তে যাচ্ছে। একই দশা গামুরিবুনিয়া আশ্রয়ন প্রকল্পের অধিকাংশ কক্ষের, চাল-বেড়া নেই। মাঝখানের পুকুরটিতে মাছ চাষের সুযোগ থাকলেও পারছে না দরিদ্র মানুষগুলো। এখানে ইউ টাইপের ১০টি ব্যারাকের ১০০ ঘরের ৫০ টি খালি পড়ে আছে। খাজুরা আশ্রয়ন প্রকল্পের ছয়টি ব্যারাকের ৬০টি ঘরের পাঁচটি খালি। চাকামইয়া-নিশানবাড়িয়ার ১৬০ টি কক্ষের ২০টি খালি পড়ে আছে। ছোট বালিয়াতলীর আটটি ব্যারাক হাউসের ৮০টি পরিবার থাকলেও এটির দশা জীর্ণ। চালিতাবুনিয়ার ১০০ কক্ষের ৪০টি খালি পড়ে আছে। একইভাবে নীলগঞ্জ আশ্রয়নের ২০টি। লক্ষ্মীর বাজারে চারটি। ফতেহপুরে ৪০টি। খাজুরায় ১০টি। পেয়ারপুরে ২০টি। কাউয়ার চরে ১৪টি। মধ্যটিয়াখালীতে ১০টি। পূর্ব হাকিমপুরে ১০টি। পূর্ব হাজীপুরে ২৬টি। এভাবে আবাসন কিংবা আশ্রায়ন মোট ২০টি প্রকল্পের ১৩৮ টি ব্যারাক হাউসের ১৩৭৭টি কক্ষের মধ্যে ৩৫৯টি কক্ষ খালি পড়ে আছে। এছাড়া ছোট বালিয়াতলীসহ তিনটি গুচ্ছগ্রামের হাল একই দশায়। এতিনটির ২০টি খালি পড়ে আছে। যারা আছেন তারা নিতান্ত দায় ঠেকে থাকছেন। যদিও সরকারি হিসেব এটি। বাস্তবে খালি কক্ষের সংখ্যা আরও বেশি। অন্তত ৪০০ কক্ষ খালি পড়ে আছে। তবে নিজেদের জমিতে রাখাইনদের জন্য করা ৫৭টি আশ্রয়নের একটিও খালি নেই। এসব গৃহপুনর্বাসন আশ্রয়ন কিংবা আবাসন প্রকল্পগুলোর বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে রয়েছেন স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনার সমস্যায়। ব্যবহার উপযোগী টয়লেট নেই অধিকাংশের। নিরাপদ পানি ব্যবহারের সুযোগ নেই। সংযোগ সড়ক সমস্যা রয়েছে। আর ঘরের জীর্ণদশার শেষ নেই অধিকাংশের। নীলগঞ্জসহ কয়েকটি আবাসন-আশ্রয়ন প্রকল্পে সমবায় ভিত্তিতে প্রশিক্ষণের পরে ঋণ দেয়ার প্রোগাম চালু রয়েছে। অধিকাংশে এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন দরিদ্র বাসিন্দারা। কমিউনিটি সেন্টারগুলো ব্যবহার উপযোগিতা নেই। বহু আবাসন-আশ্রয়নের কক্ষ দখল করে এক শ্রেণির বখাটে মাদকের ব্যবসা করছে। আবার অনেকে কাগজে-কলমে কক্ষ নিয়ে অন্যকে বিক্রি কিংবা ভাড়ায় হস্তান্তর করেছেন। এসব সমস্যা আর অনিয়মের কারণে সরকারের দরিদ্র ছিন্নমূল প্রায় ১৫০০ পরিবারকে গৃহপুনর্বাসনের সুযোগ ভেস্তে যেতে বসেছে। উপজেলা আশ্রায়ন, আবাসন কিংবা গুচ্ছগ্রাম বাস্তবায়ন টাস্কফোর্স কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তানভীর রহমান জানান, দরিদ্র ছিন্নমূল জনগোষ্ঠীকে বরাদ্দ দেয়া আবাসন/আশ্রয়ন কিংবা গুচ্ছগ্রামের ঘরগুলো মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ চেয়ে প্রাক্কলন তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। এগুলো বাস উপযোগী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মেরামত করা হচ্ছে। এছাড়া এসব পরিবারের সদস্যদের পেশার উন্নয়নে চালু থাকা ঋণ প্রোগ্রাম আরও ব্যাপকভাবে করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬:৫৩:৩৮ ● ৭০৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ